প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করা হোক

18

 

আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষাই দিতে পারে একটি আদর্শ জাতি। শিক্ষার সূতিকাগার প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিকে আদর্শ শিক্ষা পেলে তার ওপর ভর করে পরবর্তী শিক্ষাজীবন চলে মসৃণভাবে। শুরুটা ভালো হলে শেষটাও ভালো হবেÑএমন আশা করা যায়।
কিন্তু শিক্ষক ঘাটতি, পুরনো শিক্ষাদান কৌশলসহ নানা কারণে আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান সে স্তরে উন্নীত হতে পারেনি। ‘সবার জন্য শিক্ষা’Ñএ লক্ষ্যেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা। অথচ শিক্ষার মানের উন্নতির প্রথম শর্ত ভালো শিক্ষক। যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষকতার চেয়ে প্রাথমিকের শিক্ষকতা কঠিন। স্পর্শকাতর ও কোমলমতি শিশুদের বুঝে শিক্ষা দিতে হয়। অনেক প্রাথমিক শিক্ষকের শিক্ষাদানের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির বৈঠকে শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাকরি পেলেই শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। অনেক পরে হয়তো তাঁদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। আবার এটাও সত্য যে সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারীরাই আসছেন প্রাথমিকের শিক্ষকতায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেকেই কোনো চাকরি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতায় এসেছেন।
মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে নারাজ। দক্ষ শিক্ষকের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীই দুর্বলতা নিয়ে শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপটি পার করছে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষার মান সেভাবে বাড়ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। মানতে হবে, মানসম্পন্ন শিক্ষক না পেলে শিক্ষার মান বাড়বে না। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না পেলে শিক্ষকরা দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন না। আবার পেশাজীবনের শুরুতেই শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে পাঠদান শুরু করে দিলে প্রশিক্ষণও তাঁদের সেভাবে মানোন্নয়ন করতে পারে না। ফলে শিক্ষকরা একটি সুনির্দিষ্ট গÐি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। প্রাথমিক শিক্ষায় সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের মর্যাদা সেখানে ডাক্তার ও আইনজীবীদের সমান। উচ্চ বেতন, পেশার স্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদার কারণে সেখানে প্রাথমিকে শিক্ষকতার প্রতি মেধাবীরা আকৃষ্ট।
বাংলাদেশে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব সময় অবহেলিত। দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ। কোথাও কোথাও মাঠে পাঠদান করতে হয়। সরকার উদ্যোগী হলে প্রাথমিকের শিক্ষকতায় অবশ্যই মেধাবীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব।