স্টাফ রিপোর্টার
ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরই দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এর ব্যতিক্রম নয় সিলেট। একদিনের ব্যবধানে সিলেটে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১২০ টাকা। খুচরা বাজারে এখন এ পেঁয়াজের কেজি ২৪০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। আর ভারতীয় পেয়াজ কেজিতে ৯০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। কেউ কেউ তা আবার ২২০ টাকাও দাম হাঁকছেন। হঠাৎ পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
শনিবার সিলেটের প্রধান পাইকারি আড়ৎ সিলেট নগরীর কালিঘাটে গেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে ১০০ টাকা পাইকারি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে দাম। অনেকেই আবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবরে খুচরা দোকানেও হু হু করে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারের কোথাও কোথাও ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে।
সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসেছিলেন সিকন্দর আলী। কিন্তু পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম শুনে তিনি হতভম্ব। আক্ষেপের সুরে করে তিনি বলেন, কোন দেশে বাস করছি আমরা! শুক্রবার যেখানে পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ টাকা। সেই আলোকেই বাজেট করে বাজার করতে এসেছি। চাকরিজীবী মানুষ, আকস্মিক এমন দাম বাড়ায় এখন আধা কেজি পেঁয়াজ নিয়েই বাসায় ফেরতে হচ্ছে।
কাপড় ব্যবসায়ী আরিফুল হক বলেন, কালিঘাটে এক রাতে কি পেঁয়াজ শেষ হয়ে গেল? যাতে এক রাতেই দাম বেড়ে গেল ৫০ টাকা কেজি প্রতি।
পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে রীতিমত অবাক হয়েছেন নগরীর বাসিন্দা আলফাজ আলী। তিনি বলেন, এক রাতেই কিভাবে ৬০ থেকে ৮০ থেকে বেড়ে যায়। দোকানিরা মুজত রেখে ১ থেকে ২ কেজি বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। কিন্তু দাম যখন আরও বাড়বে তারা বিক্রি শুরু করবেন। এতে আড়তদার ও দোকানিরা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তারা এসব করছেন। সেজন্য প্রশাসনের কাছে তিনি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিঘাটের এক ব্যবসায়ী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল প্রকারবেদে ১০০/১০২ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে ভারতের একটি সিদ্ধান্ত শুক্রবার প্রকাশ পাওয়ার পরপরই অনেকেই পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়ৎদাররা কিংবা অন্যান্য কালিঘাটের ব্যবসায়ীদের কাছে পেঁয়াজের প্রচুর মজুদ রয়েছে। কিন্তু ভারতের একটি সংবাদ শোনার পরপরই রাতারাতি কাঁচা টাকা উপার্জন করতে তারা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলারে বেঁধে দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর আদেশ জারি করেছিল ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে সে সময় জানানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোয় আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮০০ ডলারে বহাল থাকছে বলে জানায় ভারত সরকার। ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের দপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতের খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ রুপির মধ্যে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মোঃ আমিরুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ভোক্তা অধিকার মাঠে আছে, কাজ করছে। আমি নিজে শনিবার বালাগঞ্জের গোয়ালাবাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। কয়েকটি দোকানের মালিক কে প্রায় ১৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তিনি আরও বলেন, এছাড়া ভোক্তা অধিকারের অপর দু’টি টিম মহানগর এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করছি।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক রাসেল হাসান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কৃষি অধিদপ্তর এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর কাজ করছে। যতদ্রæত সম্ভব জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট বা বাজার মনিটরিং টিমও মাঠে নামবে।