বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে ডিজিটাল নীতিমালা করার দাবি টিআইবির

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস ২০২১’-নীতিমালার খসড়ার কয়েকটি ধারা সংবিধান পরিপন্থি। খসড়ার বেশ কয়েকটি ধারা বাকস্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেল্ফ সেন্সরশিপের চর্চা করতে বাধ্য হবে।
তাই এটি বাদ দিয়ে নতুন করে নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করতে অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে টিআইবি।
রবিবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এর আগে দুপুরের দিকে একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি। এতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন। খসড়া নীতিমালা নিয়ে টিআইবির অবস্থান উপস্থাপন করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “নীতিমালাটির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ একদিকে যেমন ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ক্ষতিকর কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা, অন্যদিকে তেমন জনগণ যাতে এই প্ল্যাটফর্ম নিরাপদে ব্যবহার করে সংবিধানসম্মতভাবে বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা পায় তার বিধান করা। কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণের নামে ভারসাম্যহীন প্রতিবন্ধকতা চাপিয়ে দিয়ে ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী পরিবেশ বিনষ্ট করা হলে তা হবে ‘মাথা ব্যাথার কারণে মাথা কেটে ফেলা’র নামান্তর। ”
ড. জামান আরও বলেন, “নীতিমালায় শুধু নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে এবং এর কোনো কোনো ধারা যেমন- বার্তা প্রাপক ও প্রাপক শনাক্তকরণ এবং ঢালাওভাবে কন্টেন্ট অপসারণের বাধ্যবাধকতা, বহুমতভিত্তিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। এছাড়া পরস্পরবিরোধী ধারার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত শব্দপুঞ্জের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা না থাকায় এই নীতিমালার অপব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে। খসড়া নীতিমালায় এমন কিছু ধারা রয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একটি নজরদারিভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে অঙ্গীকার ও সম্ভাবনা, তার সাথে এই খসড়া নীতিমালা কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা খতিয়ে দেখা অপরিহার্য। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে- অন্যান্য দেশের ইতিবাচক চর্চার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে খসড়া নীতিমালাটিকে ঢেলে সাজানো। ”
নতুন একটি খসড়া প্রণয়নে টিআইবি কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- খসড়া নীতিমালাটির প্রয়োগ শুধু বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং ‘ইন্টারনেটভিত্তিক সেবাপ্রদানকারী’, ‘সেবা’ অথবা ‘অ্যাপ্লিকেশন’ ধারণাসমূহের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞায়ন করা; মহামান্য হাইকোর্টের সম্মতি, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (২০০১ আইন) এর ৯৯ ধারায় বর্ণিত প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসৃত হওয়া এবং প্রজ্ঞাপন জারির কমপক্ষে দুই বছর অতিবাহিত হলে খসড়া নীতিমালাটি কার্যকর করা; অনলাইনের ক্ষতিকর দিক নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতিকর আধেয় থেকে ভোক্তা, নিত্য ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়া জনগোষ্ঠী (নারী, শিশু, গণমাধ্যমকর্মী, সরকার বা কর্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী)- কে সুরক্ষা প্রদান, সুবিন্যস্ত ও সুশৃঙ্খলভাবে আধেয় পরিবেশনের স্বার্থে ‘সেবাপ্রদানকারীর’ সৃজনশীলতাকে সুরক্ষা প্রদান, ব্যক্তি অধিকার, বাক্ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ন্যায় মৌলিক অধিকারসমূহের সুরক্ষা প্রদান, বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানার ভিতরে ও বাইরে অবস্থানকারী উভয় ধরনের সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সমভাবে সুযোগ প্রদান ও মূল্যায়ন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিপূরণ বা প্রতিকারের বিধান নিশ্চিত করা।
এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যবহারকারীদের স্বার্থ রক্ষায় অনলাইন আধেয়-এর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিশ্চিত করা, মেধাস্বত্ব মালিকানা/অধিকার-এর সুরক্ষা প্রদান, স্থানীয়ভাবে অন্তর্ভুক্তি বা নিবন্ধন, আবাসিক কর্মকর্তা এবং স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগের বাধ্যবাধকতা সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ খসড়া নীতিমালা থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া, যৌক্তিক কারণ ব্যতিরেকে আধেয় কাটছাঁটের ঘটনা রোধে প্রক্রিয়াগত সুরক্ষাবলয় নিশ্চিত করা, নির্দেশনা অনুযায়ী আধেয় অপসারণে অপারগ বা ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পর্যায়ক্রমিক ও আনুপাতিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা ইত্যাদিও রয়েছে টিআইবির সুপারিশমালায়।