শান্তিতে নোবেল প্রাপ্ত টুটুর বিদায়

3

শান্তিতে নোবেলজয়ী ডেসমন্ড টুটু প্রয়াত হয়েছেন। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই মহান নেতার বয়স হয়েছিল ৯০। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নৈতিকতার দিকনির্দেশক। বর্ণবাদী সরকারের বৈষম্যের পথের কাঁটা। প্রবাদপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলার সমসাময়িক টুটুকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় ১৯৮৪ সালে। সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ সরকার দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত যে বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার ছিল অগ্রণী ভূমিকা। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।
ডেসমন্ড টুটু তার প্রতিবাদ দক্ষিণ আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বর্ণবাদবিরোধী এই নেতার ছিল অন্য রকম ক্ষমতা। তিনি তার প্রতি সব আঘাত প্রায়ই হাস্যরস ও উষ্ণতার সঙ্গে এড়িয়ে যেতেন। তার জীবনী লেখক স্টিভেন গিস মহান মানব ডেসমন্ড টুটুকে দক্ষিণ আফ্রিকার মার্টিন লুথার কিং হিসেবে অভিহিত করেছেন। ম্যান্ডেলা কারাগারে থাকাকালে তার আন্দোলন এগিয়ে নেন টুটুসহ অন্যরা। ১৯৭৬ সালে সোয়েটোতে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের বিক্ষোভে ব্যাপক হামলা চালায় পুলিশ। সে সময় টুটু বলেছিলেন, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকার বর্ণবাদী, তাদের পতন অত্যাবশ্যকীয় এবং তারা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অস্বীকার করছে।
স্মরণযোগ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার ধর্মযাজক ও মানবতার পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠ বিদ্রোহী ডেসমন্ড টুটু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। দেশটির তৎকালীন স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচিকে লেখা চিঠিতে টুটু লিখেছেন, ‘বোন, তোমার নীরবতার কারণ যদি মিয়ানমারের সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার বিনিময়ে হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এর মূল্য বেশ চড়া। যে দেশের নেতৃত্ব এক ন্যায়পরায়ণতার প্রতীকের হাতে, তার জন্য এটি বেমানান। তুমি যদি অটুট নীরবতায়ই নিজেকে অটল রেখে থাকো, তাহলে আমি বলব, এ নীরবতার দাম তোমার দেশের অসহায় নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দিতে হচ্ছে অনেক অশ্রু আর রক্তের মধ্য দিয়ে।’
জাগতিক নিয়মে টুটুকে বিদায় নিতে হয়েছে, এটা সত্যি। কিন্তু তার আদর্শ চিরঞ্জীব।