মো.শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সকল হাওরে উৎপাদিত আগাম বোরো ফসল রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে পৌণে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৭টি পিআইসি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে দুই দফা সময়ের মধ্যেও ৩৩নং প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। বলা যায়, সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
এবার শুরু থেকে ৩৩নং প্রকল্পের কাজ ও কৃষক-জনতার ভাগ্য নিয়ে তামাশা চলছে। যা কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ। একে তো যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। তার উপর অকাল বন্যায় হাওর তলিয়ে ফসলহানির শঙ্কা যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না। এমন উভয় সংকট থেকে রক্ষা করতে পারে শুধু এ বাঁধ। যে কারণে এ বাঁধ নিয়ে এতো আলোচনা-সমালোচনা। তা হয়েও যেন হচ্ছে না। বারবার কাজ শুরু হয়। আবার বন্ধ হয়। এ যেন শুরু ও বন্ধের খেলা চলছে। এ ক্লোজারের কাজ নিয়ে কর্তৃপক্ষ কেন এতো উদাসীন। এখানে বাঁধ যদি নাই হবে, তা হলে প্রকল্প দেয়া হলো কেন। কেন কৃষক-জনতার ভাগ্য নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে। এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভূক্তভোগী জনমনে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিগত ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধের কাজ উদ্বোধন হলেও প্রতিযোগিতামূলক কাজ চলে চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। শেষ হওয়ার কথা ২৮ ফেব্রæয়ারির মধ্যে। তাতেও হয়নি। পরে আরো এক সপ্তাহ বর্ধিত করা হয়। এতেও কাজ হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের শিবগঞ্জ বাজার থেকে রাণীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত স্থানীয় প্রধান সড়কের কুবাজপুর ও আছিমপুর গ্রামের গোপাইখালি নামক স্থানে প্রায় এক হাজার ফুট সড়ক ভেঙে বিশাল আয়তনের ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর খাদে পরিণত হয়। যে কারণে গত বর্ষা মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত এ সড়কে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। তাই এ বিশাল ক্লোজার বন্ধকরণে প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৩নং পিআইসি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও সময় মতো কাজ শুরু হয়নি। যে সময় অন্য সব প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ তখন এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
গত ২৫ ফেব্রæয়ারি এখানে জোরোশোরে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও দুই দিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। কাজের তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় কাজ বন্ধ হয় বলে এ পিআইসি কমিটির সভাপতি ইউপি সদস্য আতাউর রহমান মিলাদ জানান। অবশেষে ফের গত ১৬ মার্চ থেকে কাজ শুরু হয়।
৩০ মার্চ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সবেমাত্র প্রায় ১০ ভাগ কাজ হয়েছে। এ সময় মাটিকাটা ঠিকাদার টিটু মিয়া জানান, বৃষ্টির কারণে এখন কাজ করা যাচ্ছে না। এ সময় স্থানীয় কৃষক রুফু মিয়া, মুকিত মিয়া, আনহার মিয়া, লায়েক মিয়া সহ অনেকে বলেন, এখানে বাঁধ না হওয়ায় আমরা খুব দুশ্চিন্তায় আছি। কখন যে স্থানীয় ইটাখলা নদীতে ঢলের পানি এসে স্থানীয় কুবাজপুর, গোপাইলখালি, ছাইরাবন, খেওলা হাওর সহ অন্যান্য হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এদিকে পানি ঢুকলে ইছগাঁও-কাটাগাং হয়ে নলুয়ার হাওরের বাঁধে চাপ দিবে। সেই সাথে রাস্তা না থাকায় চলাচলও করতে পারছি না। তাই জরুরী ভিত্তিতে এখানে বাঁধ নির্মাণ করতে তারা কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৩নং পিআইসি প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য আতাউর রহমান মিলাদ জানান, এখানে বৃষ্টির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। তবুও কাজ চলছে। পাউবো’র জগন্নাথপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান গাজী বলেন, দ্রæত কাজ শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে কাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে পরিদর্শনে যাবো।