কাজিরবাজার ডেস্ক :
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানই একমাত্র পথ। শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাইডেন বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র এ অবস্থান থেকে সরে আসবে না। পাশাপাশি ফিলিস্তিনীদেরও নিরাপত্তার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে অবরুদ্ধ গাজায় টানা ১১ দিন ইসরাইলী নৃশংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত ও তাদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর কথা বলেন তিনি। গাজায় ইসরাইলী বিমান হামলা থেকে বাঁচতে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনীরা নিজঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। শুক্রবার রাতে ও শনিবার অনেক ফিলিস্তিনী তাদের বাড়িতে ফিরে দেখেন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ইসরাইলী হামলায় ওসব এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেকে তাদের বাড়িঘর চিনতে পারেননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরাইলের প্রতি ডেমোক্র্যাটদের অব্যাহত সমর্থন রয়েছে। যদিও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ও রাশিদা তাইবের মতো প্রগতিশীল ডেমোক্র্য্টা প্রতিনিধিরা ইসরাইলের কঠোর সমালোচনা করেছেন। গাজায় সহায়তা পাঠানোর কথা উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, গাজার জনগণের জন্য দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রদান ও গাজা পুনর্নির্মাণ চেষ্টায় আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদারে মার্কিন প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনীদের নিরাপত্তার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র উপভোগের সমান অধিকার রয়েছে। আমরা এসব নিয়ে নিরলস কাজ করে যাব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আমি বলেছি, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনীদের অবশ্যই সম্মান করতে হবে এবং মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছে দিতে হবে। বাইডেন বলেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য তিনি প্রার্থনা করছেন। এ সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনে অন্য দেশের সঙ্গে মিলে বড় ধরনের সহায়তা প্যাকেজেরও প্রতিশ্রুতি দেন বাইডেন। যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনে ত্রাণের প্রথম চালান পৌঁছেছে। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা পর সেখানে ত্রাণ পৌঁছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর মিসর, গাজা ও ইসরাইল সীমান্তের মধ্যকার সংযোগস্থল কেরাম শালোম খুলে দিয়েছে ইসরাইল। এ সীমান্ত দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার ত্রাণের ট্রাক ঢুকছে গাজায়। এসব ট্রাকে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধ রয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলেছে, এই এলাকার এক লাখের বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল। সেখানকার আট লাখ মানুষ খাবার পানির সঙ্কটে রয়েছে। ১১ দিনের ইসরাইলী আগ্রাসনের পর বৃহস্পতিবার রাতে গাজার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। শুক্রবার ভোর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে অনেকে গাজার রাজপথে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে এবং আকাশের দিকে গুলি ছুড়ে উৎসব পালন করেন। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রাজপথে অবস্থান নিয়ে সাধারণ জনগণ আনন্দ-উৎসব পালন করে। শুক্রবারের এ আনন্দকে ফিলিস্তিনীরা ঈদের দিনের আনন্দের সঙ্গে তুলনা করেছেন। অনেকে ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া ইত্যাদি শ্লোগান দেয়। এই সংঘাতে ইসরাইল এবং হামাস উভয়ে বিজয় দাবি করে। গাজায় যুদ্ধবিরতির খবরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে বিশ্ববাসী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অন্যান্য নেতা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির ঘটনাকে স্বাগত জানান। ১০ মে ছড়িয়ে পড়া এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির পর মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। এ চুক্তি পালনে গাজার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শক্তিশালী সশস্ত্র গ্রুপ ইসলামিক জিহাদও সম্মত হয়। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটির নিরাপত্তা পরিষদ কোন পূর্ব শর্ত ছাড়া পারস্পরিক অস্ত্রবিরতি পালনের জন্য মিসরের উদ্যোগ মেনে নিতে সকল নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সুপারিশ সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করে। হামাস ও ইসলামিক জিহাদও পৃথক বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবর নিশ্চিত করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনিও ব্লিনকেন আগামী ‘কয়েকদিনের মধ্যে’ মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতির এ খবর আসে। মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র নিড প্রাইস বলেন, ব্লিনকেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গবি আশকানাজির সঙ্গে কথা বলেছেন। আশকানাজি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ অঞ্চল সফরের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ্যান্টনিও ব্লিনকেন মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সময় তিনি সংঘাত নিরসন ও ইসরাইল-ফিলিস্তিনের জন্য উন্নত ভবিষ্যত গড়ে তোলার ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
গাজার আবাসিক এলাকায় দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের এক হিসাবে উঠে এসেছে। জাতিসংঘ জানায়, ইসরাইলী বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৯০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেখানে প্রায় সাড়ে চার শ’ ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।