দীর্ঘ ১৭ বছর পর নতুন নেতৃত্ব আসছে ওসমানীনগর ছাত্রলীগে, উপজেলা জুড়ে উৎসবের আমেজ

20
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে স্বাগত জানিয়ে ওসমানীনগরে ব্যানার- ফেস্টুনে সয়লাব।

ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
দীর্ঘ ১৭ বছর পর সিলেটের ওসমানীনগরে আসছে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি। এমন খবরে উপজেলা ছাত্রলীগে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজম। দীর্ঘদিন থেকে কমিটি না থাকায় অভিভাবকহীন অবস্থায় ছিল ওসমানীনগর উপজেলা ও তাজপুর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ইউনিটের কমিটি না হওয়ায় যেমন নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসছে না, তেমননি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
আজ রবিবার (২৭ নভেম্বর) নতুন নেতৃত্বে ওসমানীনগর উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করার জন্য ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র এবং জীবনবৃত্তন্ত সংগ্রহ করা হবে। বিকাল ৩টায় উপজেলার তাজপুর ডাকবাংলা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ উপস্থিত থেকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আগ্রহীদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র এবং জীবনবৃত্তন্ত সংগ্রহ করবেন বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেন।
এদিকে, ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের দ্বায়িত্বশীল পদ পেতে ইতিমধ্যে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে চলছে জোর লবিং ও তদবির।
একটি নির্ভযোগ্য সূত্র জানায়, ওসমানীনগর ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে নেই। নিয়ন্ত্রণ করেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সিনিয়র নেতারা। আর সিনিয়র নেতাদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপ ও উপ-গ্রুপে কর্মীদের অভাব নেই। এরা ছাত্রলীগের পদধারী না হলেও কর্মকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত। এর মধ্যে রয়েছে অনেক অছাত্রও।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০০২ সালে ফয়সল আহমদ সুমনকে সভাপতি এবং রিংকু পালকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট থানা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের কিছুদিন পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্থায়ীভাবে প্রবাসে চলে যান। ২০০৫ সালে এই কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে ওসমানীনগর থানা ছাত্রলীগ। এর পর দীর্ঘ ১৭ বছর অতিবাহিত হলেও ছাত্রলীগের আর কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় নেতাকমীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। ফলে ছাত্রলীগকর্মীদের দলীয় কর্মসূচি ভুলে নেতাদের জন্মদিনের কেককাটা ও সেলফী নিয়ে ব্যস্থ থাকতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, ২০১৪ পূর্ণাঙ্গ ওসমানীনগর উপজেলা গঠন হলে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। ২০১৭সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ত্রানবিতরনে আসলে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের গুঞ্জনে গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত থাকা ছাত্রলীগ নেতারা পদ ভাগিয়ে নিতে জোর লবিং ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। নিজেদের অনুগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পদ পাইয়ে দিতে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন ভাবে লবিং তৎপরতা চালালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে তখন কিছুটা চাঙ্গা ভাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত কমিটি গঠনের কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় সে আমেজেও ভাটা পড়েছিলো।
পরবর্তী সমেয় কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনী প্রচারণায় আসলে ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের জন্য তাদের কাছে খোলা চিঠি প্রদান করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দির্ঘদিন অপক্ষো করেও কোন সুফল মিলেনি।
গত বছরের শেষের দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দ্বায়িত্বে আসেন ওসমানীনগরের নাজমুল হোসেন। তিনি দ্বায়িত্ব গ্রহনের পর ওসমানীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদনের আশা জাগে নেতাকর্মীদের মনে।
উপজেলা ও তাজপুর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষে জীবন বৃত্তান্ত চেয়ে ২২ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একাধিক খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিলও পথসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা জুড়ে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে তৈরি করা হয়েছে শুভেচ্ছা তোরণ। মাঠের প্রচারণা ছাড়াও ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে জানতে একাধিকবার জেলা ছাত্রলীদের সভাপতি নাজমুল হোসেনের মোবাইলফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।