কাজিরবাজার ডেস্ক :
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের দোকানপাট ভাঙচুর, মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এক সুয়োমটো আদেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে বাংলাদেশের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানবাধিকার কমিশনের আদেশে অনাকাক্সিক্ষত হামলা ও লুটপাটের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি রয়েছে কিনা এবং পুলিশ যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে কিনা, একমাসের মধ্যে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কমিশনের চেয়ারমান নাছিমা বেগমের সই করা আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘মহানবীকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে লোহাগড়ায় হিন্দুদের দোকানপাট ভাঙচুর, মন্দিরে অগ্নিসংযোগ’ সংক্রান্ত সংবাদের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা স্থানীয় একটি বাজারের ৬টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট এবং একটি মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে মর্মে প্রকাশিত সংবাদ মারফত জানা গেছে। এছাড়া ৪টি বাড়িঘর ও এর আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ টাকাসহ স্বর্ণের গহনা লুট করার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ার অশোক সাহার ছেলে আকাশ সাহা ফেসবুকে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই এলাকাবাসী আকাশকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করে। পরে উত্তেজিত জনতা দিঘলিয়া বাজারের নিত্য দুলাল সাহা, অনুপ সাহা, অশোক সাহা, সনজিদ সাহার মুদি দোকান এবং গোবিন্দ কুণ্ডু ও গৌতম কুণ্ডুর মিষ্টির দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এ ছাড়া সাহাপাড়ার গৌরসাহা, চায়না রানী সাহা, বিপ্লব সাহার বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাঙচুরসহ এবং স্বর্ণলংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। তারা নাড়ু গোপালের বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট করে। উত্তেজিত জনতা রাত ৯টার দিকে আখড়াবাড়ী সর্বজনীন পূজামণ্ডপে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বাংলাদেশের মতো একটি অসাম্প্রদায়িক দেশে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কোনও ধর্মকে অবমাননা করার অধিকার যেমন কারও নেই, তেমনই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করার অধিকারও কাউকে দেওয়া হয়নি। কমিশন মনে করে, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ বারবার সংঘটিত হচ্ছে। কেউ ধর্মকে অবমাননা করলে তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা সমীচীন।
ঘটনায় মহানবী (সা.)কে কটূক্তির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুততার সঙ্গে গ্রেফতার করে অনাকাক্সিক্ষত হামলা ও লুটপাটের পরিস্থিতি এড়ানোর ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি আছে কিনা, এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট নিবৃত্ত করার বিষয়ে পুলিশের যথাযথ ভূমিকা ছিল কিনা, তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৭ আগস্টের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।