অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে। পদ্মা সেতুর নামকরণ করা হয়েছে পদ্মা নদীর নামেই। এ নিয়ে রবিবার জারি করা হয়েছে সরকারী প্রজ্ঞাপন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপনের পর প্রকাশিত হয়েছে সরকারী গেজেট। তাতে বলা হয়েছে, বহুমুখী তথা সড়ক ও রেল সংযোগ সংবলিত এই সেতুর নাম হবে পদ্মা সেতু। জুন মাসের ২৫ তারিখ সকালে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন সেতুটির প্রধান রূপকার ও স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বভাবতই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে জমকালো জাঁকজমকপূর্ণ এবং দেশব্যাপী। প্রকৃতপক্ষে তিনি সমগ্র বাঙালী জাতির পক্ষে একেবারেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাস্তবায়নকারী। সেতুটির প্রস্তাবিত নাম ‘শেখ হাসিনা সেতু’ রাখার বিষয়টিও তিনি এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন। বলেছেন, পদ্মা সেতুর নাম হবে নদীর নামেই। পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবেই নয়, এর জন্যও তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ইতিহাসে। প্রজ্ঞাপন ও গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে চূড়ান্ত হলো বিষয়টি।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রাজনীতির সাতকাহন’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান দেশেবিদেশে পদ্মা সেতুর নেপথ্যের কিছু ষড়যন্ত্র তুলে ধরেন, যার পেছনে ছিল বিশ্বব্যাংক আনীত তথাকথিত ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ। প্রকারান্তরে যেটি সর্বৈব মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে কানাডার আদালতে। অথচ এর জন্য তৎকালীন যোগযোগমন্ত্রীকে পদত্যাগ এবং সেতু বিভাগের সচিবকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক এমনকি এডিবি এবং জাইকার ওপরও চাপ সৃষ্টি করে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার জন্য। সেই হিসেবে বলা যায় পদ্মা সেতু একান্তভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৎসাহস এবং দূরদৃষ্টির ফসল। সুগভীর দেশপ্রেমের পরিচায়কও বটে।
নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মাণ শেষ হয়েছে আপামর বাঙালীর দীর্ঘদিনের আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর। সারাবিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের ভয়াবহ মৃত্যুঘাতী সংক্রমণে বিপর্যস্ত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান, তখন দেশবাসীর কাছে এর চেয়ে আশাব্যঞ্জক খবর আর কি হতে পারে? অথচ এই পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিয়ে দেশে ও বিদেশে বাংলাদেশকে নানা প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলাসহ ভাবমূর্তির সঙ্কটেও নিপতিত হতে হয়েছে। ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিশ্বব্যাংকসহ দাতাগোষ্ঠীর সরে যাওয়া, নানা গুজব ও নেতিবাচক প্রচারণা, হাসি-তামাসা, দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি, মামলা ইত্যাদি কোন কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারেনি দেশবাসীর সুদৃঢ় মনোবল, সদিচ্ছা ও কর্মোদ্যোগ। আর এসবের পেছনেই নিরন্তর নির্ভীক অকুতোভয় ও দৃঢ়প্রত্যয়ী মনোভাব নিয়ে অকুণ্ঠ সমর্থন-সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মূলত তাঁর অন্তহীন দুঃসাহসী দৃঢ়চিত্ত উদ্যোগ ও সঞ্চালনেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু বর্তমানে দৃশ্যমান এবং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়।