কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের নতুন নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গণবিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে রবিবার (৩০ অক্টোবর)। নিবন্ধন পেতে ইতোমধ্যে ৪০টির মতো রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। শেষ দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। এবার আগ্রহী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতের সাবেক নেতাদের সম্পৃক্ততা থাকায় বিডিপি ও এবি পার্টি আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া বাহারি নামে একাধিক দল আবেদন করেছে নিবন্ধনের জন্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। নতুন দল নিবন্ধন চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে ইসি জানিয়েছে, শর্ত পূরণ করতে পারলে আবেদনকারীদের নিবন্ধন দেওয়া হবে, না হলে নিবন্ধন পাবে না।
কতগুলো দল আবেদন করেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, রবিবার আবেদন জমা দেওয়া শেষ হলে বিষয়টি বলা যাবে। তবে কমবেশি ৪০টির মতো দলের আবেদন এ পর্যন্ত ইসিতে জমা পড়েছে।
‘বাহারি’ নাম
এবার যেসব দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুসকিল লীগ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), নৈতিক সমাজ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, নতুন বাংলা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক মুক্তি আন্দোলন (বিজিএমএ), বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক জোট (পিডিএ), বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বৈরাবরী পার্টি, বাংলাদেশ বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও ননপ্রবাসী কল্যাণ দল, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ আম জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট (বিডিএম), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি (বাংলাদেশ টিজেপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল গ্রীন পার্টি, বাংলাদেশ সার্বজনীন দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক লীগ, গণ রাজনৈতিক জোট (গর্জো), নতুন ধারা বাংলাদেশ (এনডিবি), ভাসানী অনুসারী পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় দল, কৃষক শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ ইত্যাদি।
রবিবার দুপুরে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুর গণঅধিকার পরিষদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন দল নিবন্ধন চলমান একটি প্রক্রিয়া। শর্ত পূরণ করেছে কিনা, গঠনতন্ত্র ঠিক আছে কিনা- সব ঠিক থাকলে নিবন্ধন পাবে। শর্তপূরণ করতে না পারলে নিবন্ধন পাবে না।
নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন গত ২৬ মে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিলো ২৯ আগষ্ট। পরে নির্বাচন কমিশন আরও দুই মাস সময় বাড়িয়ে ৩০ অক্টোবর করে।
নিবন্ধনের শর্ত
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিন দলকে নিবন্ধন পেতে তিনটি শর্তের মধ্যে অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। শর্ত তিনটি হলো -বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত যে কোনও সংসদ নির্বাচনের যে কোনও একটিতে দলীয় নির্বাচনি প্রতীকে একটি আসন পেতে হবে। কোনও সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত ৫ শতাংশ ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় ও অন্তত ১০০টি উপজেলায় বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
এর আগে নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিলে ৭৬টি দল আবেদন করেছিল। তবে, কোনও দল ইসির শর্তপূরণ করতে না পারায় নিবন্ধন পায়নি। পরে অবশ্য আবেদনকারী দলগুলোর মধ্যে দুটি আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায়।
ইসি সূত্র জানায়, এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টিই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’ প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দুটি হল- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। প্রথম বছরে ১১৭টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ৩৯টি দল নিবন্ধন পায়। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়। এছাড়া ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নামে নতুন একটি দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়।
বর্তমানে ইসির নিবন্ধনে ৩৯টি রাজনৈতিক দল রয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় পাঁচটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এদের মধ্যে জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয় আদালতের আদেশে। অন্য তিনটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে ইসির শর্ত পূরণ করতে না পারার কারণে।
ইসির নিরীক্ষায় নিবন্ধিত দল
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত ৩৯ দলে নিবন্ধন শর্তাদি প্রতিপালন হচ্ছে কি-না তা তদারকিতে নামছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে অফিস; নির্বাচিত কমিটি ও সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে কি-না তার হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে দলের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসির উপসচিব মো. আব্দুল হালিম খান বলেন, নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত মানছে কি-না তা জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দলগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পর তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কোনও দল শর্ত প্রতিপালন না করলে কমিশন চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও জানান তিনি।