বাচ্চা চুরির অভিযোগে নর্থ ইস্ট হাসপাতালে হামলা-ভাংচুর

6

স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল এলাকার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাচ্চা চুরির অভিযোগে ঘটে গেছে তুলকালাম কাণ্ড। হামলা ও ভাংচুরের পর দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেও সমঝোতা হয়নি। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় এ বিষয়ে ফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তান চুরির অভিযোগ তুলে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন এক প্রসূতির স্বজনরা। এসময় হাসপাতালের কয়েকটি বুথ ও কক্ষের গ্লাস এবং কম্পিউটার ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ গ্রহণ করেনি বলে তাদের অভিযোগ।
পুলিশ, ভুক্তভোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন দক্ষিণ সুরমার তেতলি এলাকার প্রবাসী মাসুক মিয়ার স্ত্রী শারমিন বেগম। তিনি সেখানে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকের দেয়া ব্যবস্থাপত্র ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র নেন সংশ্লিষ্টরা। এর কিছুক্ষণ পর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শারমিনের একটি সন্তান প্রসব হয়। কিন্তু পূর্বের আলটাসোনগ্রাফির রিপোর্ট অনুযায়ী প্রসূতির স্বজনরা দুটি বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করলে কর্তব্যরতরা কোনো সদোত্তর দেননি। পরবর্তীতে স্বজনরা নর্থ ইস্ট হাসপাতালে করা আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখাতে বললে সেটা না দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান কর্তব্যরতরা। এক পর্যায়ে শারমিনের স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাসও দেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা একাধিকার বিষয়টি জানতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যান।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকেল ৩ টার দিকে হাসপাতালে শারমিনের স্বজনরা গেলে অসদাচরণ করেন দায়িত্বশীলরা। এর জেরে হাসপাতালের লোকজন ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে শারমিনের স্বজনরা হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উভয়পক্ষকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করে। তবে বৈঠকে বসলেও হাসপাতালের সকল পরিচালক না থাকায় দুপক্ষের সমঝোতা হয়নি।
এ ব্যাপারে শারমিনের দেবর নিজাম উদ্দিন বলেন- আমরা তাদের কথামতো আলট্রাসনোগ্রাফি করাই। এতে বলা হয়- আমার ভাবির গর্ভে দুটি সন্তান রয়েছে এবং তারা সুস্থ আছে। কিন্তু হাসপাতালে আসার পর আমার ভাবির সিজার করা হলে একটি সন্তান আমাদের কাছে এনে দেয়া হয়। এ বিষয়ে কর্তব্যরতদের আমরা জিজ্ঞেস করলে তারা কোনো সদুত্তর দেননি। পরবর্তীতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানাই। কিন্তু শনিবার বাচ্চা প্রসব হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্তও সুরাহা করেননি। আমরা হাসপাতালে এসে বিষয়টি জানতে চাহিলে কর্তব্যরতরা আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা আমাদের উপর হামলা চালালে আত্মরক্ষার স্বার্থে আমরা তা প্রতিহত করি। তিনি আরও বলেন- আমাদের নিয়ে বৈঠক করা হলেও পরিচালকদের অনেকেই অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টির সুরাহা হয়নি। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় আমাদের নিয়ে ফের বৈঠক বসবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন- আমাদের হাসপাতালে এসে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে সবকিছু ভেঙে দিয়েছেন ওই রোগীর স্বজনরা। এতে আমাদের হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করে ফেলে। এ ঘটনার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত দুটি বাচ্চার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- হামলা ও ভাঙচুরে ঘটনায় আমরা পুলিশে অভিযোগ দিতে চাইলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী বলেন- আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। এ তথ্য সঠিক নয়। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই নেবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন- খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।