বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই সারাদেশে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী, বজ্রবৃষ্টি। অন্যদিকে বাংলাদেশের উজানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অসম, মেঘালয় ও অরুণাচলে প্রায়দিনই হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত। বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটেও। ইতোমধ্যে সারিঘাট ও গোয়াইনঘাট নদীর পানি অতিক্রম করেছে বিপদসীমা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, খুব শীঘ্রই সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় আকস্মিক বন্যা হতে পারে। সেই সঙ্গে উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢলের সমূহ আশঙ্কা। যা প্রকারান্তরে প্রতি বছরই দেশের সুবিস্তৃত হাওর অঞ্চলের অধিবাসীদের অবর্ণনীয় দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশার আরেক নাম। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে আরও বলা হয়েছে, দেশের ৩৯টি নদনদীর পানি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, ৩৩টি নদীর পানি বাড়ছে, ৬টি নদীর পানি কমছে। উজানে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ অংশেও ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনার পানি বাড়তে পারে। ফলে কৃষক বাধ্য হয়ে জলমগ্ন জমির আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছে। হাওর অঞ্চলে আকস্মিক পানি বৃদ্ধি তথা বন্যার জন্য ভঙ্গুর ফসল রক্ষা বাঁধও বহুলাংশে দায়ী। যার সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা। কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন তিনি।
দেশে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত শিল্পায়ন সাধিত হলেও মূলত কৃষিই যে বাংলাদেশের আয়-উন্নতির প্রাণভোমরা এ কথা অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। মনে রাখতে হবে যে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনও গ্রামে বসবাস করে এবং তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশায় জড়িত। করোনা মহামারীজনিত দফায় দফায় লকডাউনে দেশের শিল্প-কারখানাসহ প্রায় সবকিছুর কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিত থাকলেও কৃষিকাজ থেমে থাকেনি একদিনের জন্যও। যে কারণে বোরো-আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক ধান-চালের আশানুরূপ দাম পেয়েছেন। অন্যদিকে প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কেউ না খেয়ে থাকেনি। মোটকথা, কৃষিই মূলত বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। সে ক্ষেত্রে সুবিস্তৃত হাওর অঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে টেকসই করে গড়ে তোলা জরুরী ও অত্যাবশ্যক। পানি উন্নয়ন বোর্ড এর দায় ও দায়িত্ব এড়াতে পারে না কোন অবস্থাতেই।