কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বের ৩০ শতাংশ জনগণের কোভিড ভ্যাকসিন-ভাগ্য এখনো অনিশ্চিত! এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, কোভ্যাক্স পরিষেবার (ভ্যাকসিন গবেষণা, উৎপাদন ও সুষম বণ্টনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় তৈরি আন্তর্জাতিক জোট) মাধ্যমে বিশ্বের ৭০ শতাংশ জনগণের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছতে পারবে। কিন্তু ৭৮১ কোটি বিশ্ববাসীর মধ্যে ২৩৪ কোটি (মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ) জনগণের কাছে তা পৌঁছবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। বিশ্বের ধনী দেশগুলো ইতিমধ্যেই একাধিক ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে বসে আছে, যাতে সফল ভ্যাকসিন তৈরি হওয়া মাত্রই তারা সংশ্লিষ্ট দেশকে ভ্যাকসিন দেয়। যা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে।
তাদের বক্তব্য, কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছে, সাম্প্রতিককালে অন্য কোনো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে কি না, মনে করা যাচ্ছে না। এ যেন নির্বাচনের আগে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন বা সূচনার তাড়াহুড়োর মতোই পরিস্থিতি। কিন্তু কোনো প্রকল্প আর ভ্যাকসিন, এই দুইয়ের দ্রুততার মধ্যে যে বিরাট পার্থক্য ও বিপদ রয়েছে, সেটাই অনেকে ভুলে যাচ্ছেন বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরামর্শদাতার কথায়, ‘পরিসংখ্যানের দিক থেকে যদি দেখা যায়, তা হলে এই মুহূর্তে বিশ্বের ১৭০টি দেশ কোভ্যাক্স পরিষেবার সঙ্গে জড়িত। এবং এই পরিষেবার আওতায় বিশ্বের ৭০ শতাংশ বাসিন্দা আসছেন। বাকিদের ক্ষেত্রে কী হবে, এখনো কেউ সেটা জানে না।’
তিনি আরও জানাচ্ছেন, কোভ্যাক্স পরিষেবার মাধ্যমে ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত ২০০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ় সুনিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে ‘হাই রিস্ক’ও ‘ভালনারেবল’ এবং ‘ফ্রন্টলাইন হেলথ ওয়ার্কার্স’-কে ভ্যাকসিন দেয়া যায়।
কিন্তু সেটা তো ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত! তার আগে সার্স কোভ-২ সংক্রমণের চেহারা কী হবে, কতজন আক্রান্ত হবেন, কতজনের মৃত্যু হবে, সেই চিত্র তো কারও কাছে পরিষ্কার নয়। নির্দিষ্ট সময় অন্তর গাণিতিক মডেল তৈরি করেও এর কোনো দিশা পাওয়া যায়নি।
মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে যে রাজনীতি চলছে, সেটা অন্য কোনো ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি!’ এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রয়েছে। ফলে তার একটা চাপ সে দেশের ক্ষমতাসীন দলের উপরে রয়েছে। সেই কারণে ভ্যাকসিন দ্রুত বাজারে এসে যাওয়ার ঘোষণা মার্কিন সরকারকে করতে হচ্ছে।’
শুধু রাজনীতি নয়, ভ্যাকসিন আগে বাজারে এনে মুনাফা লাভের জন্য বিভিন্ন নির্মাতা সংস্থার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। যার বিপদ নিয়ে আগে বার বার সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞেরা, তা যেন আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। চণ্ডীগড়ের ‘পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর যোগেশ চাওলা জানাচ্ছেন, শুধু তো রাজনীতি নয়, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে যে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে, সেটা তো শুরুর থেকেই স্পষ্ট। তার কথায়, ‘যে আগে ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবে, সেই সংস্থার কাছ থেকেই সবাই কিনবে। ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার আর্থিক মুনাফা হবে। এ জন্য যদি ভ্যাকসিনের সুরক্ষার দিকটার সঙ্গে আপস করা হয়, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই!’