মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলায় নারী আইনজীবী আবিদা সুলতানা হত্যার ঘটনায় বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়েছে।
সোমবার রাত পৌণে ১১টার দিকে বড়লেখা থানায় শরিফুল ইসলাম বাদি হয়ে ৪জনের নাম উল্লেখ হত্যা মামলা রুজু করেন।
এছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা মাদ্রাসা এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া বাড়ির ভাড়াটিয়া মসজিদের ইমাম তানভীরের ব্যাগ থেকে আইনজীবি আবিদার সুলতানার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।
মামলা রুজুর পর বড়লেখা উপজেলার জ্যৈষ্ঠ বিচারিক আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে,আদালত রিমান্ড শুনানী শেষে হত্যা মামলার প্রধান আসামী মসজিদের ইমাম তানভীর আহমদকে ১০দিন ও তার স্ত্রী হালিমা সাদিয়া, ভাই আফসার আলম ও মা নেহার বেগমের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ আদালত।
২৮ মে দুপুরে বড়লেখা উপজেলায় জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাশ কুমার আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সোমবার রাতে নিহত আবিদা সুলতানার জানাযা শেষে তার স্বামী শরিফুল ইসলাম থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় আবিদা সুলতানাদের বাড়িতে ভাড়া থাকা স্থানীয় মসজিদের ইমাম তানভীর আহমদ, তার স্ত্রী হালিমা সাদিয়া, ভাই আফসার আলম ও মা নেহার বেগমসহ অজ্ঞাতনামা আরো বেশ কয়েকজনকে এই মামলায় আসামি করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলা রুজুর পর আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
হত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে বাড়ির গাছ কাটা, জমি-জমা অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় আছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সবকিছু এখন বলা যাবে না। আমরা তদন্তে অগ্রসর হচ্ছি, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর হত্যার মূল কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে ওসি তদন্ত জসিম উদ্দিন জানান।’
এদিকে, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুস ছালেক মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, আবিদা সুলতানা হত্যাকান্ডের মূলহোতা মসজিদের ইমাম তানভীর আহমদকে সোমবার দুপুর দেড়টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা মাদ্রাসার পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়। তানভীর ওই মাদ্রাসার মসজিদে এতেকাফে অংশ নেয়। তানভীর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই মাদ্রাসায় তার রেখে যাওয়া ব্যাগ থেকে আবিদা সুলতান মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
প্রসঙ্গত: রবিবার (২৬ মে) রাত ৩টার দিকে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের পৈতৃক বাড়ি থেকে আবিদা সুলতানা (৩৫) নামে এক নারী আইনজীবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের ধারণা ওইদিন দুপুরের দিকে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় আবিদার বাবার বাড়ির ভাড়াটিয়া তানভিরের মা ও স্ত্রীকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে আবিদার পৈতৃক বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া তানভির আহমদ (৩০) পালিয়ে যায়।
নিহত আবিদা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও বড়লেখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ, স্থানীয়রা ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে। তার স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন, তিনি দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি বিয়ানীবাজারে থাকেন।
আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়েই বিবাহিত। তাদের মধ্যে আবিদা সুলতানা (৩৫) বড়। আবিদা মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। তিনি স্বামী শরীফুল ইসলামের সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরে বসবাস করতেন। তার স্বামী ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন। আবিদার পৈতৃক বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে তানভির আহমদ থাকতেন।
নিহত আবিদার বোনের স্বামী মারুফ আহমদ বলেন, সকালে (২৬ মে) আবিদা আপা মৌলভীবাজারে যাওয়ার জন্য আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। দু’দিন আগে তিনি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রবিবার সকালে সেখান থেকে তিনি বাবার বাড়িতে যান। এরপর থেকে তার কোনও খোঁজ মিলছিল না। পরে আমার স্ত্রী খুঁজতে এখানে (মাধবগুলে) আসেন। এখানে ঘরে প্রবেশ করে একটি কক্ষ তালাবদ্ধ পান। পরে পুলিশ নিয়ে তালা ভেঙে আবিদা আপার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বড়লেখা থানার ওসি ইয়াছিনুল হক বলেন, নিহতের মাথায় ও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ওই রাতে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন হয়েছে। তানভিরের মা ও স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।’
এ ঘটনার পর পর তানভির আহমদকে (৩০) বড়লেখা থেকে পালিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা এলাকায় বরুণা মাদ্রাসায় আত্মগোপন করে।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. আব্দুস ছালেক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তানভিরকে সোমবার (২৭ মে) দুপুর দেড়টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন।
তানভিরের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আমনদী গ্রামের মায়নুল ইসলামের ছেলে। সে বড়লেখা উপজেলার মাধবগুল জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন।’