কাজিরবাজার ডেস্ক :
খোশ আমদেদ মাহে রমজান। আহলান ওয়া সাহলান। আকাশে বাঁকা চাঁদ মুচকি হাসার সঙ্গে সঙ্গে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের প্রতিশ্রুত রমজান মাসের শুভাগমন ঘটল। আজ এ মাসের পহেলা দিবস। আমরা সাদরে বরণ করে নিলাম সেই মাসকে, যেই মাসের ইবাদাত হাজার মাসের ইবাদাতের চাইতে উত্তম। রমজান মাস হলো ইসলামী বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস। এ মাসে বিশ^ব্যাপী মুসলিমগণ রোজা পালন করে থাকেন। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় হলো রোজা। এ মাসে প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ওপর রোজা পালন করা ফরজ। রোজা বা সাওম হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এড়িয়ে চলা। যদিও শুধুমাত্র পানাহার থেকে বিরত থাকলেই যে রোজার উদ্দেশ্য হাসিল হবে এমনটি নয়। রমজান এমন একটি মাস যে মাসের ইবাদাত আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় এবং ইবাদাতের সাওয়াবও অধিকগুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়।
রমজানের উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ওহে মানুষেরা, তোমরা যারা ইমান এনেছ, রমজান মাসের রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ তাই রমজানে শুধু কিছু নির্দিষ্ট সময় খাওয়া বর্জন করলেই হবে না বরং সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। রোজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সেহেরি খাওয়া। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায় – (বাকারা, আয়াত ১৮৭)। রাসূল (স.) রোজায় সেহেরি খাওয়া সম্পর্কে এভাবে বলেছেন: যে রোজা আমাদের তাকওয়া দেবে, সংশোধন করবে, পরহেজগার বানাবে ও সম্মানের সঙ্গে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে। আমাদের রোজা রাখার নিয়তে সেহেরি খেতে হবে। যেসব মুসলমান ভোর রাতে নির্দিষ্ট সময় জেগে আল্লাহ পাকের হুকুম মেনে সেহেরি খেতে বসে আল্লাহ তাদের ওপর খুশি হয়ে তাদের জন্য রহমত অবতীর্ণ করেন এবং মহান আল্লাহর ইবাদাতরত ফেরেশতারা সেহেরি গ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ দুআ করতে থাকেন।
মাহে রমজানের প্রথম রজনী থেকে শুরু হলো বিশেষ সিজদা, বিশেষ মোনাজাত, বিশেষ ফরিয়াদ পবিত্র খতমে তারাবির মাধ্যমে। মুসল্লিগণ আগ থেকেই দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করে নেয় নিজের পছন্দমতো কোন মসজিদে মাহে রমজানের বিশেষ উপহার খতমে তারাবি শুরু ও সমাপ্ত করার। আজ সূচনা তারাবিতে কত সুন্দর দোয়া মোনাজাত মু’মিন মুসলমানরা পরওয়ারদিগার মহিমাময় আল্লাহর দরবারে পেশ করেছে। তারা তারাবি নামাজের হাফেজ সাহেবদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেছেন: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউযুবিকা মিনান-নার…।’ খোদাওয়ান্দ তায়ালা! মাহে রমজানের অসিলায় তোমার শাহী দরবারে ফরিয়াদ করি আমাদের পাপ-তাপ মোচন করে জান্নাতের ভাগি বানাও আর জাহান্নাম থেকে পানাহ দান কর…।’
ভিন্নরকম পৃথিবীতে সিয়াম সাধনা শুরু হলো। যখন মানুষেরা করোনা ওমিক্রনের মতো ভয়াবহ মরণ ব্যাধির তাড়া খেয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা তো লেগেই আছে। সমাজে সর্বত্র বেকারত্বের চাপ, প্রবাসীদের অনেকেই দেশে প্রত্যাবর্তন করে ঘরে বসা। ধর্মীয়ভাবে আজ দুই বছর ধরে জিলহজের চাঁদে হাসি নেই। পবিত্র হজের মতো বার্ষিক আকর্ষণীয় ইবাদাত থেকে বঞ্চিত বলে মুসলিম দেশে দেশে নিদারুণ হতাশা বিরাজ করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এর ওপর আবার রমজানের আগমন উপলক্ষে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়। এমন দিনে মাহে রমজানের চিরন্তন ভ্রাতৃত্বের অনুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সামর্থ্যবান মুসলমানদের। নবীজী (স.) বলেছেন : হাজা শাহরুল মাওয়াসাত – এ হলো পরস্পর ভ্রাতৃত্ব প্রদর্শনের মাস। সামান্য ডাল, চাল, তেল, খোরমা খেজুর প্রভৃতি দিয়ে আমরা প্রতিবেশী ও পথিক অভাবীদের সেহেরি ইফতারের দৈন্য সময়ে হাসি ফুটাতে পারি।