স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট জেলা বিএনপির বহুল প্রত্যাশিত সম্মেলন ও কাউন্সিল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত নগরীর রেজিষ্ট্রারী মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বেলা ১১টার দিকে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে বিএনপির সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসীনা রুশদীর লুনা।
কাউন্সিলে সভাপতি পদে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শামীম আহমদ বিজয়ী হন।
এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে রেজিষ্ট্রারী মাঠে নির্মাণ করা হয় বিশাল মঞ্চ। শামিয়ানা টানিয়ে তৈরী করা হয় সম্মেলনস্থল। মাঠের এক পাশে তৈরী করা হয় গোপন ভোট কক্ষ। মঞ্চের এক পাশে বসানো হয় স্বচ্ছ কাচের ব্যালট বাক্স। দীর্ঘ সময় লাইন ধরে ভোট প্রয়োগ করেন ১৮ উপজেলার ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির কাউন্সিলারবৃন্দ। পুরো রেজিষ্ট্রারী মাঠে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রেজিষ্ট্রারী মাঠ, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, তালতলা পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট ও বন্দরবাজার পয়েন্টজুড়ে নির্মাণ করা হয় তোরণ। ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে চেয়ে যায় সম্মেলন স্থলের আশপাশ এলাকা। এতে শোভা পায় নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী, মরহুম অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও বর্ষীয়ান বিএনপি নেতা মরহুম এম এ হক সহ প্রবীণ নেতাদের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড। বেলা দেড়টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল ৪টায় শেষ হয়। ১ হাজার ৮১৮ জন কাউন্সিলারের মধ্যে ১ হাজার ৫৭৫ জন ভোট প্রদান করেন। এরপর শুরু হয় ভোট গণনা। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে গণনা।
সভাপতি পদে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ৮৬৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবুল কাহের চৌধুরী শামীম পান ৬৭৫ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ৭৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলী আহমদ পান ৫৭৩ ভোট। এ পদে অন্য ২ প্রার্থী আব্দুল মান্নান ৮১ ভোট ও আ.ফ.ম কামাল ৭২ ভোট পান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে শামীম আহমদ ৬২৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এডভোকেট মুজিবুর রহমান পান ৪৬৪ ভোট ও লোকমান আহমদ পান ৪৩৯ ভোট।
কাউন্সিলকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। কাউন্সিলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দ রিটার্নিং ও প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
জানা যায়, সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী একসময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানে ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তাছাড়া তিনি দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি’র দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনপি’র নেতাকর্মীরা মনে করছেন, তারা তাদের কাক্সিক্ষত নেতৃত্ব নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন মাঠের রাজনীতিতে কাইয়ুম-এমরান ও শামীমের ক্যারিশমা দেখার অপেক্ষায় তারা।
এদিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও আলী আহমদ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। জেলা বিএনপি’র শীর্ষ দু’টি পদে তাদের বসাতেই সম্মেলন ও কাউন্সিলে নানা নাটকীয়তা চলে বলে অভিযোগ দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীর। আর নতুন নেতৃত্বে মেয়র আরিফ বলয়ের পাল¬াই প্রচারান্তরে জোরদার হয়েছে।