কাজিরবাজার ডেস্ক :
টানা পরিবহন ধর্মঘটের পর মঙ্গলবার থেকে পণ্য পরিবহনের ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে দেশজুড়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমেও গতি ফিরেছে। তবে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও লরির ভাড়া বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে এবং আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এতে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ভোক্তাদের ওপর। ভোক্তাদেরও এই বর্ধিত ভাড়ার কারণে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এদিকে বাসভাড়া ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলেও বাস মালিকরা আদায় করছেন ৫০ শতাংশেরও বেশি। আবার সিএনজি ভাড়া না বাড়লেও সিএনজিচালিত বাসও ৫০ শতাংশের বেশি বাসভাড়া আদায় করছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, যাত্রী ও ভোক্তাদের চরম মূল্যের বিনিময়ে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘিরে পণ্যবাহী গাড়ির ধর্মঘট স্থগিত করায় আমদানি পণ্যের ডেলিভারিসহ চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মযজ্ঞ ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও কন্টেনারবাহী লরির চলাচল। বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, পণ্যবাহী গাড়ির ধর্মঘটের মধ্যেও বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের ডেলিভারি ও ডিপোতে কন্টেনার আনা-নেয়া বন্ধ ছিল। অনেক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ডেলিভারি পণ্যবোঝাই করে অপেক্ষায় ছিল ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার। বন্দর সচিব মোঃ ওমর ফারুক বলেন, ধর্মঘটের মধ্যেও বিশেষ ব্যবস্থায় বন্দরের ডেলিভারি ও কন্টেনার পরিবহন হয়েছে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর পুরোদমে ডেলিভারি চলছে। সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের প্রথম দিন শুক্রবার বন্দরে ডেলিভারি ও ডিপো থেকে কন্টেনার আনা-নেয়া অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও শনিবার থেকে সোমবার বিঘ্ন ঘটে। রফতানি পণ্যের কন্টেনার যথাসময়ে বন্দরে না আসায় কয়েকটি জাহাজ ধারণক্ষমতা ও পরিকল্পনার চেয়ে কম কন্টেনার নিয়ে বন্দর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ইতোমধ্যেই আরও বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম। বাজারে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষজন। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো না হলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ অসহনীয় ভোগান্তির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তারা। বুধবার রাজধানীর কাওরানবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ধর্মঘট তুলে নেয়ার পর থেকে রাজধানীতে নিয়মিত ট্রাক আসলেও ব্যবসায়ীদের গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত ভাড়া গুনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আনতে হচ্ছে কাঁচাবাজারের পণ্য। ফলে চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলছেন, ট্রাক মালিকরা বেশি দামে পণ্য পরিবহনের আশায় আছেন। অন্যদিকে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও কম হচ্ছে। জানতে চাইলে কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে আরও দুর্বিষহ ও অসহনীয় হয়ে উঠবে।
৫০ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়িয়েছে অধিকাংশ বাস : বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন রুট ঘুরে দেখা গেছে, ডিজেলচালিত বাসের পাশাপাশি সিএনজিচালিত বাসগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি। কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ২ টাকার বেশি পড়ছে। কোথাও কোথাও আবার তা ছাড়িয়েছে ৪ টাকা। অথচ ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, গণপরিবহনের একটি বিরাট অংশ সিএনজিচালিত। কিন্তু তারা বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বর্ধিত বাসভাড়া কার্যকরের আগে কত বাস গ্যাসে চলে, আর কত বাস তেলে চলে তার সুরাহা হওয়া দরকার ছিল। তা না করে এক লাফে ১ টাকা ৪২ পয়সার ভাড়া করা হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। সঠিক ব্যয় বিশ্লেষণ করলে বড়জোর ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা যেত। তিনি আরও বলেন, ভাড়া বাড়ানোর বৈঠকে কোন যাত্রীর প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।