স্টাফ রিপোর্টার :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন দুরদৃষ্টিসম্পন্ন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ শুধু দলের নয়, জাতীয় অস্তিত্বের দর্শন। আওয়ামীলীগ নিজেদের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি দাবী করে। কিন্তু তারাই স্বাধীনতার মূলনীতি ধ্বংসের মূল হোতা। তারা শুরু থেকেই নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে জাতির সাথে প্রতারণা করেছে।
মঙ্গলবার তিনি সিলেট রেজিষ্ট্রারী মাঠে সিলেট জেলা বিএনপির দ্বি বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত এসব কথা বলেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের সভাপতিত্বে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল ও মাহবুবুল হক চৌধুরী পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নিখোঁজ জননেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনা।
বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, নিজেদের স্বার্থে তারা ৭২ সালে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। তাদের দুঃশাসনের কারণে ৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। অথচ ৭৬ সালে শহীদ জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের সমৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। আওয়ামী বাকশালের ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে এনে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। তাই তাদের মূখে জিয়ার সমালোচনা শোভা পায়না। জিয়া প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের নতুন উদাহরণ সিলেটে দিনের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন। গণতন্ত্র হত্যাকারী সরকারের কাছে জেলা বিএনপির ভোট নজির হয়ে থাকবে। তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আগামীতে দেশে বড় আন্দোলনের পথ প্রশ^স্ত হবে। বাকশালী সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, জিয়াউর রহমান গার্মেন্টস ও রেমিটেন্স সিস্টেম চালুর মাধ্যমে দেশে উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি সুচনা করেছিলেন। দেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের শত্রুরা শহীদ জিয়াকে হত্যা করে। তারাই আজ শহীদ জিয়া প্রবর্তিত বহদলীয় গণতন্ত্রের পতাকা সমন্নুত রাখতে নিয়োজিত তিন বারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দিচ্ছেনা। হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। বিচার বিভাগকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। প্রশাসনকে দলীয় ক্যাডারের ভুমিকা পালনে বাধ্য করছে। মেগা উন্নয়নের নামে আওয়ামীলীগ মেগা দুর্নীতির নামে লুটপাট করছে।
১০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে শুরু করা পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়তে বাড়তে ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। আর তা কেবলই লুটপাটের কারণে। এভাবে মেট্রোরেল সহ বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো মূলত আওয়ামীলীগের লুটপাটের পথ প্রশ^স্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব দুর্নীতির টাকা তারা বেগম পাড়ায় পাচার করছে। দলীয় লোকদের গঠিত সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্যের এমন অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি। তারা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও ব্যর্থ। খুন, গুম, হত্যা ও ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে রাজনীতির ময়দানে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের নেত্রীকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলা প্রমাণ করে প্রশাসনকে কোন পর্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিলেটের জনপ্রিয় নেতা আমার ভাই ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ ও গাড়ী চালক আনসার আলীকে গুম করে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তাদেরকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সময়ের ব্যবধানে সকল হিসাব আওয়ামীলীগকে দিতে হবে।
জেলা ওলামা দল নেতা মাওলানা জিল্লুর রহমানের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচিত কাউন্সিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা, সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী।
কাউন্সিলের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অনুভুতি পেশ করে বক্তব্য রাখেন, নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বাবা ডা: মঈন উদ্দিন। অনুষ্ঠানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী।
সম্মেলনে গুম হওয়া বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর ছেলে ব্যারিষ্টার আবরার ইলিয়াস, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের বাবা ডা. মঈন উদ্দিন, ছাত্রদল নেতা জুনেদ আহমদের মাতা আয়েশা বেগম ও ছোট ভাই হাসান মঈন উদ্দিন ময়নুল, গাড়ী চালক আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগমের কাছে সমবেদনামূলক সম্মাননা ক্রেষ্ট তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এছাড়া সুন্দর ও প্রাণবন্ত কাউন্সিল আয়োজন করায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট আব্দুল গাফফার সহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কাউন্সিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা: শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য আলী আজগর তালুকদার হেনা, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, কেন্দ্রীয় সদস্য এডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম প্রমূখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডা এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, একটি সুন্দর ও সার্থক কাউন্সিল আয়োজনের মাধ্যমে সিলেট জেলা বিএনপি ও নির্বাচন কমিশন নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। এই দৃষ্টান্ত সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট আব্দুল গাফফারের সঠিক নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় কাউন্সিলকে সফল ও সার্থক করে তোলা সম্ভব হয়েছে। বিএনপি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হয়নি। দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা বিএনপির মাধ্যমেই সম্ভব এর প্রমাণ রেজিষ্ট্রারী মাঠের কাউন্সিল।