কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী মারিওপোল অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে মনে করছে ব্রিটেন। ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকেই রুশরা শহরটি দখল নিতে মুখিয়ে রয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেন সৈন্যরাও শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে প্রাণপণ লড়াই করছে। মঙ্গলবার ব্রিটেনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রয়্যাল ইনস্টিটিউট সার্ভিসেসের স্থলযুদ্ধ বিশারদ জ্যাক ওয়াটলিং বলেন, মারিওপোলের দখল পেলে রুশদের ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হবে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধানসূত্র খুঁজতে মঙ্গলবার তুরস্কের ইস্তান্বুল শহরে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে রুশ ও ইউক্রেন প্রতিনিধিরা। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের উপস্থিতে বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠক শুরুর আগে উভয় পক্ষকেই বেশ শীতল মনে হয়েছে। বৈঠকের আগে কোন ধরনের করমর্দনও করেননি উভয় দেশের প্রতিনিধিরা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া এই শান্তি আলোচনায় উদ্বোধনী ভাষণ দেন স্বাগতিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন উভয়কে তার ‘মূল্যবান বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এই আলোচনার অগ্রগতি দুই নেতার সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি করবে। আর সেই আলোচনা আয়োজনের জন্যও তুরস্ক প্রস্তুত রয়েছে।
রাশিয়ার কেউ ইউক্রেন যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছেন না। মঙ্গলবার ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্র পেসকভ এ কথা বলেন। ইউক্রেন সংঘাতে তৃতীয় কোন পক্ষ জড়ালে পুতিন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন তার আগের দেয়া বিবৃতিতে তিনি এমন পরামর্শ দিয়েছিলেন কিনা সাক্ষাতকারে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে পেসকভ বলেন, ‘না’ ‘আমি তা মনে করি না। তবে তিনি জোর দিয়ে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ না করার কথা বলেন। আর যদি তা করা হয়, তাহলে তা প্রতিহত করতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব। আর যারা তা করতে আসবে তাদের সকলকে চরম মূল্য দিতে হবে। সাক্ষাতকারে ক্রেমলিন মুখপাত্র রাশিয়ার পক্ষে এ সংঘাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘কেউ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের চিন্তা করছে না, এমন কি কেউ এটি ধারণার মধ্যেই আনছেন না।’ পেসকভ বলেন, ‘রাশিয়ার নেতা ভøাদিমির পুতিনের ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক বক্তব্য একেবারে ভীতিকর। পেসকভ আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে একেবারে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্ভূত নতুন পরিস্থিতিতে আমরা নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছি। তবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা একেবারে অবন্ধুসুলভ। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দরনগরী মিকোলাইভের একটি সরকারী ভবনে রুশ সামরিক বাহিনীর হামলার পর ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আঞ্চলিক গবর্নর ভিতালি কিম এর আগে বলেছিলেন, সরকারী একটি ভবনে রুশ বাহিনী হামলা করেছে। হামলার পর অনেকেই ভবনের ভেতর থেকে বের হয়ে এসেছেন। তবে বেশিরভাগই আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আটজন বেসামরিক মানুষ এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যের খোঁজ মিলছে না। গবর্নর ভিতালি কিম ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টে বলেন, ‘আঞ্চলিক সরকারী প্রশাসন ভবনে হামলা হয়েছে। ভবনের অর্ধেক ধসে গেছে। আমার কার্যালয়েও হামলা হয়েছে।’ গবর্নরের কার্যালয় থেকে টেলিগ্রামে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভবনটির বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। পুরো ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভিতালি বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপে আটজন বেসামরিক মানুষ আটকা আছেন। তাঁদের উদ্ধার করার আশা করছি আমরা। এ ছাড়া তিনজন সেনাসদস্যের খোঁজ চলছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর পর কয়েক সপ্তাহ ধরে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী মিকোলাইভে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় বসতে হবে : নিরাপত্তার প্রশ্নে এখন হোক বা পরে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় বসতে হবে। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অবশ্যই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা ‘ব্যক্তিগত অবমাননা’ প্রভাব ফেলবে। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার এ কথা বলা হয়েছে। শনিবার ইউক্রেন সীমান্তবর্তী পোল্যান্ড সফরে গিয়ে পুতিনকে ‘কসাই’ আখ্যায়িত করেন বাইডেন। রুশ প্রেসিডেন্টকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এর জেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাইডেন। তার এমন মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে মস্কো। সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর থেকেও সমালোচনা এসেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অবমাননা পেছনে ফেলে রাখা যায় না।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘ কৌশলগত স্থিতাবস্থা, নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ের প্রশ্নে আজ হোক বা কাল, আমাদের কথা বলতে হবে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর জবাবে রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীনভাবে ব্যাপক অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।