গুগলের অবৈধ ২৮টি ক্যাশ সার্ভারের কী হবে?

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নেশনওয়াইড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) ছাড়া অন্যরা (বিভাগীয়, জেলা ও থানা পর্যায়ের আইএসপি) গুগল ক্যাশ সার্ভার ব্যবহার করতে পারবে না এমন নির্দেশনা রয়েছে বিটিআরসির। তারপরও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অমান্য করে দেশের একাধিক আইএসপি প্রতিষ্ঠান গুগলের ক্যাশ সার্ভার ব্যবহার করছিল।
গত নভেম্বর মাসে বিটিআরসি দেশের ১১টি জেলায় বিভিন্ন আইএসপিতে অভিযান চালিয়ে অনুমোদনহীনভাবে ব্যবহার হওয়া ২৮টি গুগল গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভার জব্দ করে। পরবর্তী সময়ে সেগুলো অনুমোদিত টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবহারের জন্য গুগলের স্থানীয় ডিলার প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।
জানা যায়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির একাধিক পরিদর্শক দল সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, সিলেট, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও খুলনায় নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত নভেম্বর মাসে ১২টি আইএসপি (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) অফিস ও এনওসি পরিদর্শন করে অনুমোদনবিহীন গুগল গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভার চিহ্নিত, জব্দ ও সিলগালা করে।
দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটর, আইআইজি অপারেটর (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে), এনআইএক্স (ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ) ও নেশনওয়াইড আইএসপিগুলোকে (১২৯টি) ক্যাশ সার্ভার স্থাপনের নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে শৃঙ্খলা আনা, জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের সুরক্ষা, গ্রাহক সংখ্যা, মনিটরিং ব্যবস্থা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বিটিআরসি এই নির্দেশনা দেয়।
বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়, কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নেশনওয়াইড আইএসপি ছাড়া অন্যসব আইএসপি অপারেটরকে ইতোপূর্বে স্থাপিত সব ধরনের ক্যাশ সার্ভার আগামী ৬ মাসের মধ্যে অপসারণ করতে হবে। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ৬ মাসের সময় দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বিটিআরসি, যার মেয়াদ ছিল ৩১ জুলাই পর্যন্ত। পরে আরও মেয়াদ বাড়িয়ে তা করা হয় ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, আইআইজি ও এনআইএক্স অপারেটরের পাশাপাশি শুধু মোবাইল অপারেটর ও নেশনওয়াইড আইএসপি অপারেটর কমিশনের অনুমোদনক্রমে ক্যাশ সার্ভার স্থাপন করতে পারবে। নেটফ্লিক্স ক্যাশ সার্ভার শুধু এনআইএক্স (নিক্স) অপারেটর প্রান্তে স্থাপনের অনুমতি বহাল থাকবে। এ ছাড়া ক্যাশ সার্ভার স্থাপন, রক্ষুাবেক্ষু, প্রতিস্থাপন, আপগ্রেডেশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিটিআরসি থেকে আগে অনুমোদন নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর বিটিআরসি থেকে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, সব মোবাইল অপারেটর, ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, আইআইজ, এনআইএক্স, আইএসপি ও ক্যাটাগরি আইএসপি অপারেটরদের গুগল গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভার, ফেসবুক, আকামাই বা অন্যান্য যেকোনও ক্যাশ সার্ভার স্থাপন ও ব্যবহারের জন্য কমিশন থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এই ১২টি আইএসপি কমিশনের নির্দেশনা প্রতি পালন করে গুগল গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভারগুলো বিটিআরসি থেকে পূর্বানুমতি গ্রহণ না করায় ২৮টি সার্ভারকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।
বিটিআরসির পরিদর্শক দল স্কাইনেট চৌমুহনী কাছ থেকে ৪টি, ডিজিটাল ডট নেটের কাছ থেকে ২টি, এয়ারনেট কমিউনিকেশন্স থেকে ২টি, মেসার্স হেল্পলাইন থেকে ২টি, মেসার্স কম্পিউটার কমপ্লেক্স নেটওয়ার্ক থেকে ২টি, মেসার্স মিলেনিয়াম কম্পিউটার্স অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং থেকে ৪টি, অনিক কম্পিউটার্স অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং থেকে ২টি, মেসার্স ইউনিক অনলাইন থেকে ২টি, মেসার্স ইউনিকম মাল্টি সিস্টেম থেকে ২টি, দৌলতপুর অনলাইন থেকে ২টি, কগনেট ব্রডব্যান্ড থেকে ২টি ও রেড নেটওয়ার্ক লিমিটেড আইএসপি থেকে থেকে ২টি-সহ মোট ২৮টি অবৈধ গুগল গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভার জব্দ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের আইএসপিগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘আইএসপি অপারেটরগুলো কোনও ক্যাশ সার্ভার দিয়ে অবৈধ ব্যবসা করেনি। অপারেটরগুলো শুধু ভ্যালু অ্যাড করে সেবা দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যেহেতু সবার কাছে ক্যাশ সার্ভার থাক এমনটা চাচ্ছে না, সেহেতু এরই মধ্যে অবৈধগুলো (আগে বৈধ ছিল) বন্ধ হয়ে গেছে।’ তিনি জানান, সরকারের নতুন নিয়ম মেনে অপারেটরগুলো ক্যাশ সার্ভারের জন্য অনুমোদন নেওয়া সত্ত্বেও গুগলের অসহযোগিতার কারণে সেগুলো ডেপ্লয় করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে ব্যবহারকারীদের ওপরে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিটিআরসির ২৫৮তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে এই ২৮টি সার্ভার যাতে অনুমোদিত টেলিকম অপারেটররা আবারও ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য গুগলের স্থানীয় ডিলার রিভ সিস্টেমস লিমিটেডকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইল রিভ সিস্টেমস কর্তৃপক্ষ জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সার্ভারগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। এগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে আবারও ব্যবহার করা হবে।