কাজিরবাজার ডেস্ক :
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়বে কি না সে বিষয়ে আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সিদ্ধান্ত জানাবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশন সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে সবগুলো গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বিদ্যুতের পাইকারি দর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আদৌ এসব প্রস্তাব আমলে নিয়ে দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করবে কি না, সে বিষয়ে আজ কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
কমিশন সূত্র আরও জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যদি মনে করা হয় দাম বাড়ানো প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে প্রস্তাবগুলো আমলে নেওয়া হবে। আর যদি মনে করা হয় দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই, সেক্ষেত্রে প্রস্তাবগুলো ফেরত পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে আপাতত আর দাম বাড়বে না।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেছেন, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির দাম বাড়ানো হবে না। করোনার এই পরিস্থিতির মধ্যে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ালে সংশ্লিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
চলমান মহামারিতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের ‘সুনামি’তে নতুন করে আবারও মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। দেশে কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে গণপরিবহনে ভাড়াসহ সবধরনের পণ্যের মূল্যে। এরপর আবার যদি গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে মানুষের জীবনে বাড়তি চাপ পড়বে। সঙ্গত কারণে সরকার বিষয়টি নিয়ে আবারও ‘চিন্তা করছে’ বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তবে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ‘অর্থমন্ত্রণালয়ের চাপে হয়েছে’ বলে জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বিপিসির আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিইআরসি সূত্র বলছে, গত সপ্তাহ এবং চলতি সপ্তাহ জুড়ে দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং বিপিডিবি কমিশন নির্ধারিত ছকে গ্যাস এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বুধবার কমিশনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে প্রস্তাবগুলোর সার্বিক বিষয় আলোচনা হবে। সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে যদি মনে হয় দাম বৃদ্ধি প্রয়োজন তাহলে প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
কমিশন আইন অনুযায়ী, যদি কমিশন প্রস্তাবগুলো আমলে নেয়, তাহলে গণশুনানিতে দাম নির্ধারিত হবে। গণশুনানিতে আবেদনকারী কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারলে কমিশন ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন দাম নির্ধারণ করবে।
বিইআরসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগেতো আমরা প্রস্তাবগুলো আমলে নেই, তারপর না হয় দাম বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তিনি জানান, আজ (বুধবার) কমিশনের জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে, সেখানেই জানা যাবে আসলে কী হবে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো আবাসিকের দুই চুলার গ্যাসের দাম ৯৭৫ টাকা বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এক চুলার সংযোগ ও শিল্পেও উল্লেখ যোগ্য হারে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতিদিন মাত্র ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি স্পট মার্কেট থেকে কেনা হচ্ছে। এছাড়া দৈনিক যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি কেনা হচ্ছে তাও নির্দিষ্ট দামেই কেনা হচ্ছে। এছাড়া দেশে গ্যাসের দামও বাড়েনি, তাহলে কেন দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়াতে হবে তা নিয়ে প্রশ্নে উঠেছে।
জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এলএনজি আমদানির জন্য সার, গ্যাস এবং বিদ্যুতে ৭০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। তবে অর্থ বিভাগ থেকে মাত্র সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এলএনজির জন্য অর্থ চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।