কমলগঞ্জের দলই চা বাগান ২২ দিনেও চালু হয়নি, এজিএম এর গাড়ির গ্লাস ভাংচুর, ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ

25
কমলগঞ্জের দলই চা বাগানে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে রাখে।

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই চা বাগান দীর্ঘ ২২ দিন পর বুধবার চালু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করে। বাগানের ব্যবস্থাপক পরিবর্তন না হওয়া ও বাগান চালুর নোটিশে শ্রমিকদের দায়ী করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। সকাল ১০ টায় কোম্পানীর এজিএম বাগানে প্রবেশ করতে চাইলে শ্রমিকরা আপত্তি জানান। এ সময় দুই নারী শ্রমিককে টানা হেঁচড়া করে লাঞ্ছিত করায় গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করে টানা চার ঘন্টা এজিএম খালেদ খানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শ্রমিকরা। পরে প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপক ও এজিএমকে পুলিশি সহায়তায় চা বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দলই চা বাগানের গেইট বন্ধ করে উত্তেজিত শতাধিক নারী শ্রমিকরা বাগান অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের পিছনে পুরুষ শ্রমিকরা অবস্থান করে। বুধবার চা বাগান চালু নোটিশ দেয়া হলেও চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে প্রত্যাহার না করে ম্যানেজমেন্ট নোটিশের শুরুতেই শ্রমিকদের বেআইনী আন্দোলনের ফলে বন্ধ হওয়ার কথা তুলে ধরায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হন। বুধবার সকাল থেকেই শ্রমিকরা বাগানের অফিসের সম্মুখে জড়ো হন। তারা ব্যবস্থাপকের অপসারণ দাবি করেন। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকাল ১০ টায় কোম্পানীর এজিএম খালেদ খান গাড়ি নিয়ে বাগানে প্রবেশ করতে চান। এ সময়ে শ্রমিকরা তাকে আপত্তি জানালে নারী শ্রমিক খোদেজা বেগম (৫৫) ও ফাতেমা বেগম (৫০) কে টানা হেচড়া করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা চা বাগানের এজিএম এর গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করেন ও এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বেলা ১২টায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু সরেজমিনে গিয়ে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। পরে বেলা ২টায় শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেলে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় এজিএম ও ব্যবস্থাপককে বাগান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
চা বাগানের নারী শ্রমিক সবিতা মাদ্রাজী, রীনা রিকমুন, আচামা মাদ্রাজী, দ্বীনি ভূমি, স্বপ্না রিকমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২২দিন পর এজিএম বাগানে এসেই নারীদের গায়ে হাত তুলেছে। তাদের টানা হেচড়া করে গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে। এটি কোন মতেই সভ্য আচরণ নয়। তারা আরও বলেন, আমরা এখনও ধৈর্য ধরে আছি। আমরা কোন খারাপ আচরণ করিনি। আমাদের মা বোনদের লাঞ্ছিত করেছে।
টানা ২১ দিন চা বাগান বন্ধ থাকার পর সোমবার (১৭ আগষ্ট) বিকালে ৪টায় মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে বেঠকের সিদ্ধান্তে ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় পূর্বের দেয়া নোটিশ প্রত্যাহার করে বুধবার থেকে দলই চা বাগান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর এদিন রাতেই ধলই চা বাগান কোম্পানী বিতর্কিত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ধলই চা বাগানে অনুপ্রবেশ করে।
মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির নির্দেশনায় আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের বুঝিয়ে এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে নিরাপদে চা বাগান ত্যাগের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ বলেন, চা শ্রমিকদের বোঝানোর পর তারা পরিবেশ তৈরী করায় নিরাপদে এজিএম ও ব্যবস্থাপককে দলই চা বাগান থেকে বের হয়েছেন। চা বাগান কোম্পানীর পক্ষে জিপ গাড়ি ভাংচুরের মৌখিক অভিযোগ ও নারী চা শ্রমিক লাঞ্চিত হওয়ারও মৌখিক অভিযোগ থাকলেও বিকাল পর্যন্ত থানায় কোন পক্ষ লিখিত অভিযোগ করেনি।
এ ব্যাপারে দলই চা বাগান ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ও এজিএম খালেদ খানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।