পর্যটকদের টানছে বিকি বিলের লাল শাপলা

41
তাহিরপুরে বিকি বিলে লাল শাপলা দেখতে আসা পর্যটকরা।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
ফুটছে লাল শাপলা, দিগন্ত বিস্তৃত সৌন্দর্যের মায়াজালে টানছে পর্যটকদের। প্রস্ফুটিত লাল শাপলা আর শাপলার সবুজ পাতার আড়ালে ঢাকা পড়ছে বিলের নীল জল। সাথে দূরের মেঘালয় পাহাড়ের হাতছানি, অগুনতি ফুলের মেলা সব মিলে বিলে ঘুরতে আসা পর্যটক বিমুগ্ধ শাপলার রূপ দেখে। তবে এবার কিছুটা কম উপস্থিতি পর্যটকদের। গেলো বছর (২০২০ সাল) গো খাদ্যের জন্য শাপলার ডাটামুল কেটে নিয়ে যায় হাওর পারের লোকজন। ফলে শাপলা ফুল শূন্য হয়ে পড়ে হাওর। সে খবরে কিছুটা হতাশ হয় ঘুরতে আসা পর্যটক।
বিগত বছর অনেক পর্যটক বিলে এসে ঘুরে যান শাপলার দেখা পাননি। তাই এবার কিছুটা উপস্থিতি কম পর্যটকদের। অনেকেই খোজ খবর নিচ্ছেন,অনেকে এসে ঘুরে গেছেন।
বিলের বাস্তব চিত্র দেখতে মঙ্গলবার সকালে শাপলার হাওর বিকে বিলে। তাহির পুর সদর বাজার থেকে নৌকা নিয়ে মাটিয়ান হাওরের কিছুটা অংশ পাড়ি দিয়ে ঘন্টা খানেক এর মধ্যে আমাদের নৌকা পৌঁছে বিলে । তখনও ভোরের আলো ঠিকমত ফোটে নি। কিন্তু হাওরের চারপাশ লাল হয়ে ফোটে আছে লাল শাপলা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শাপলা। কোথাও কম, কোথাও বেশি।
বিলের মধ্যে দুটি ধারা রয়েছে। এ দুটো ধারাতে বন নেই। এই জলের ধারা দিয়ে এদিক ওদিকে ছোট ছোট টেম্পু নৌকা যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে। আমরা একটি ধারা দিয়ে নৌকা ভেতরে প্রবেশ করি। কিছু দূর যাওয়ার পর পানি কম থাকায় নৌকা বার বেশী দূর যেতে পারে নি। তারপর পিছনে ফিরে এসে আমবাড়ি গ্রামের পাশে নৌকা থামিয়ে বিলের জলে লাল শাপলার মোহনীয়তা উপভোগ করি।
সে সময় কথা হয় বিলে ঘুরতে আসা বাদাঘাট সরকারী ডিগ্রি কলেজ শিক্ষার্থী অনন্যার সাথে। সে জানায় এক সাথে এত ফুল দেখতে তার ভালোই লাগে। এর আগে সে একসাথে এত ফুল দেখেনি।
বিকি বিলের অবস্থান তাহিরপুর উপজেলার দু’ইউনিয়নের মধ্যে। উত্তর বড়দল ও দক্ষিণ বড়ল ইউনিয়নের আমবাড়ি, বোরখারা, কাশতাল, চরগাঁও সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে বিলের চতুর পাশে। বাদাঘাট বাজার থেকে কাশতাল সড়কে দু কিলোমিটার পথ বাইকে পাড়ি দিলেই দেখা মিলে বিকি বিলের। তাছাড়া উপজেলা সদর থেকে নৌকা করে ঘন্টা খানেক হাওর পথ পাড়ি দিলে সহজেই দেখা মিলবে বিকি বিলের।
২০১৯ সালে তৎ সময়ের জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আহাদ বিল ঘুরে দেখেন। সে সময় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন বিলটিকে সুনামগঞ্জের পর্যটন স্পট ঘোষনা করে একটি বিল বোর্ড টানিয়ে দেন বিলের পারে। সে বছর প্রচুর লোকজন আসে বিলে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে গো-খাদ্যের জন্য লোকজন শাপলার ডাটা মূল কেটে নিয়ে যায়। সে খবর প্রচারিত হলে পর্যটক শূন্য হয় বিকি বিল। চলতি বছর বিল আবার তার চির চেনা রূপে ফিরতে শুরু করে।
এর মধ্যে আবারো হাওরের বিভিন্ন দিকে কিছু কিছু স্থানে গো-খাদ্যের জন্য শাপলার ডাটা ও মূল কেটে নিয়ে যাচ্ছেন লোকজন। এ অবস্থা দিনের পর দিন চললে একদিন শাপলা শূন্য হয়ে পড়বে এ হাওরটি। আমার হারাবো নান্দনিক সৌন্দর্য। আর বিমুখ হবে পর্যটক।
উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বোরখারা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান, হাওরে ফুল দেখতে প্রচুর লোকজন আসেন। আশ পাশের গ্রামের কিছু লোকজন শাপলা কেটে নিয়ে যান। ফলে বিলের সৌর্ন্দয্য কিছুটা বিলীন হচ্ছে। আমারা স্থানীয় লোকজনদের বলি তারা যেনো শাপলার ডাটা মূল কেটে নিয়ে না যান।
পর্যটক, ফটোগ্রাপার পয়েল আহমেদ (সিলেট) বলেন, হাওরের লাল সবুজ শাপলা আর দূরের নীল মেঘালয় এক কথায় অসাধারণ। আমি এবারো আসবো বিকি বিলে শাপলার ছবি তুলতে।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, বিকি বিল এখন অনেক পর্যটকদের পরিচিত। বিলের লাল শাপলার কারণে অনেক লোকজন আমাদের এলাকাকে নতুন করে চিনেছেন। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব বিলের লাল শাপলাকে বাঁচিয়ে রাখা। সেই সাথে শাপলা দেখতে যারা হাওরে আসেন তাদের সহযোগিতা করা।