পূজায় শৃংখলা রক্ষায় পুলিশের মতবিনিময় ॥ সিলেট জেলা ও মহানগরে এবার ৬৭০টি মন্ডপে ১০ অক্টোবর থেকে দুর্গোৎসব শুরু

6
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে আইন শৃংখলা ও নিরাপত্তা সংক্রান্তে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম।

স্টাফ রিপোর্টার  :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আগামী ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে। পূজার জন্য সিলেট জেলা ও মহানগরী মিলে ৬৭০টি মন্ডপে চলছে সাজ সাজ রব। শিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরিতে। রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করতে চলছে তাদের কসরত।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, আগামী ১০ অক্টোবর মহাপঞ্চমীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা। পর্যায়ক্রমে আসবে দশমীর দিন। আর সেদিন বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার তথ্যানুসারে, সিলেট জেলাজুড়ে এবার ৬০৫টি মন্ডপে হবে পূজা উদযাপন। আর মহানগর এলাকায় হবে ৬৫টি মন্ডপে। মহানগরের মধ্যে সার্বজনীন ৫০টি ও পারিবারিক ১৫টি মন্ডপ রয়েছে। সবমিলিয়ে ৬৭০টি মন্ডপে মহা ধুমধামে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে এখন। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির বিষয়টিও মাথায় রাখছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।
যেমনটি বলছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন ঘোষ, ‘এবারও করোনার কারণে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ অনেকগুলো নির্দেশনা মেনে পূজো আয়োজনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, আগামী ১০ অক্টোবর মহাপঞ্চমীর মধ্যে দিয়ে শারদী উৎসব শুরু হবে। তাই মন্ডপে মন্ডপে চলছে দেবী দুর্গার বর্ণিল সাজ-সজ্জার শেষ মুহূর্তের কাজ। প্রতিমায় রঙ করা হচ্ছে। পূজোর যাবতীয় উপকরণ, পূজো, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, চণ্ডীপাঠ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি, ভজন কীর্তন, আলোকসজ্জা ও ডেকোরেশনসহ নানান প্রস্তুতি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূজোর দিন ঘনিয়ে আসায় শিল্পীদের এখন চরম ব্যস্ততা। রঙ-তুলির আঁচড়ের শেষ কাজটুকু করছেন তারা।
নগরীর দাড়িয়াপাড়া এলাকার প্রতিমাশিল্পী দুলাল পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন চলছে রঙ-তুলির কাজ। দু-চারদিনের মধ্যে প্রতিমাগুলো পূর্ণতা পাবে। এখানে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ২০ হাজারের মধ্যে একটি মন্ডপের প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে চলছে কেনাকাটার ধুমও। নগরীর বিপণিবিতান ঘুরে কাপড়ের দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, প্রতিটি পূজামন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা, জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা ও পরিদর্শন বই রাখার জন্য আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি। আশা রাখছি, এবার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শারদ উৎসব আনন্দ-উল্লাসে উদযাপন করা হবে।
দুর্গোৎসবে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়: সিলেট জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ লাইন্স-এর বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ এসপি এম. শামসুল হক মিলনায়তনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। সহকারি পুলিশ সুপার শেখ মুত্তাজুল ইসলাম-এর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জন ঘোষ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম সরকার, গোলাপগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী এবং জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইনসহ সিলেট জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সকল থানার অফিসার ইনচার্জগণ, সিলেট জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং সিলেট মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, সিলেট মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি সুব্রত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃংখলা সংক্রান্ত বিষয়ে সকল থানা থেকে আগত পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ ও উপস্থিত সকলের মতামত গ্রহণ করেন।
সভায় পুলিশ সুপার জানান, সিলেটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে নিজ নিজ ধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সতর্ক রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে পুজা উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য পোষাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোষাকে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।
এছাড়া সিলেট জেলাধীন সকল সার্কেল ও থানার অফিসার ইনচার্জগণকে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ সুপার, সিলেট মহোদায় পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দকে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে জরুরি মুহূর্তে জেনারেটর রাখা, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন, নারী-পুরুষ আলাদা লাইনে প্রবেশ ও বাহিরের ব্যবস্থা করা, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে আযান ও নামাযের সময় মাইক বন্ধ রাখা, সম্ভব হলে সিসিটিভি স্থাপন করা, প্রতিটি মন্ডপে আগুন নিয়ন্ত্রক সিলিন্ডার রাখাসহ বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি নিশ্চিত করেন যে, যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অঘটনের সংবাদ প্রাপ্তির সাথে সাথে সিলেট জেলা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, এবারে সিলেট জেলার ১১ টি থানার ৪৬২টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।