কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে এবারও আইন প্রণয়নের সম্ভাবনা নেই। আগামী ইসিও রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠন হতে যাচ্ছে।
নির্ধারিত ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ৪ জন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমান সিইসি ও অন্যান্য ইসিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এরই মধ্যে নতুন সিইসি ও ৪ ইসি নিয়োগের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনের বিষয়টি রাজনৈতিক আলোচনায় উঠে এসেছে।
সংবিধানে ইসি গঠনে আইনের কথা বলা থাকলেও এ সংক্রান্ত আইন এখন প্রণয়ন হয়নি। পরবর্তী ইসি গঠনের আগে এ আইন করা হচ্ছে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। কোনো কোনো দল থেকে আইন তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে।
তবে, সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবারও ইসি গঠনে আইন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আইন করে ইসি গঠনের ব্যাপারে ইতিবাচক। আওয়ামী লীগও মনে করে ইসি গঠনে আইন করা যেতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তারা আগামী ইসিও রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠনের চিন্তা-ভাবনা করছেন।
বর্তমান ও গত নির্বাচন কমিশন এ প্রক্রিয়াতেই গঠন করা হয়েছে। সংবিধানের ১১৮(১) ধারা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অনধিক ৪ জন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এর আগে ইসি গঠনের জন্য কেউ আইন করেনি। দীর্ঘদিন এভাবেই চলে আসছে। এর আগে দুটি নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে যেভাবে গঠন করেছেন, এবারও সেভাবেই হবে। আইনের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে চিন্তা করা যেতে পারে।
অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং বর্তমানে সংসদের প্রধান বিরোধী দলে রয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন দুটি সরকারে জাপা থেকে মন্ত্রীও ছিল। সেই দলটিও ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের কথা বলেছে।
সম্প্রতি জাপা চেয়ারম্যান এবং সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ইসি গঠনে দেশে আইন নেই। অথচ সংবিধানে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে। আইনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিয়ে তাড়াহুড়া করার সুযোগ নেই। অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার বিষয় আছে। মনে হয় না পরবর্তী ইসি গঠনের জন্য যে সময় আছে তার মধ্যে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব। হয়তো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
বর্তমান ইসি গঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই ইসির ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর নতুন কমিশন দায়িত্ব নেবে। এ জন্য ইতোমধ্যে কমিশন গঠনের অনানুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের এক সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে হয়, যথা সময়ে সেভাবেই হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গতবারও রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন, সেই কমিটিতে বিএনপিরও প্রতিনিধিত্ব ছিল। তাদের একজন এখনও আছেন। বিভিন্ন সময় তিনি নোট অব ডিসেন্ট দেন, ইসির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন- এটা গণতন্ত্রের বিউটি।