দেশ আজ মাদক-ইয়াবায় সয়লাব – রাষ্ট্রপতি

11
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিষেক সমাবর্তনের বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রথম সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ৷ পুরো বাংলাদেশ আজ মাদক-ইয়াবায় সয়লাব হয়ে যাচ্ছে এবং এতে দেশের তরুণেরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে মাদক থেকে দূরে থাকতে গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
সোমবার বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিষেক সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা। বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রাষ্টপতির ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশে মাদক ঢোকার একটি অন্যতম রুট হচ্ছে কুমিল্লা। আমি অত্যন্ত ব্যথিত যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো জায়গায় এই মাদকের বিস্তার সবচাইতে বেশি। মাদকের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘তোমরা আজ দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নে প্রধান চালিকাশক্তি। তোমরা ন্যায় ও সত্যকে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা ও দৃঢ়তা নিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। বিবেকের কাছে কখনো পরাজিত হবে না।’
আব্দুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রামগতিতে কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়ে বলেছিলেন, সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি, মূলত সংগ্রাম মাত্র শুরু হয়েছে। এবারের সংগ্রাম সোনার বাংলা গড়ে তোলার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সমাবর্তন বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের যেসব প্রতিকূলতা আছে আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের তালে সেগুলো মানিয়ে নিতে হবে। ব্রিটেনের অনেক গ্রামে ব্রডব্যান্ড নাই। সেই তুলনায় আমাদের গ্রামগঞ্জে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। আমরা আশাবাদী ২০২৪ সালের মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকংকে পিছিয়ে অর্থনীতিতে এগিয়ে যাবো।’
এছাড়াও সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
শিক্ষা উপমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় আবদ্ধ থাকলেই চলবে না নিতে হবে ব্যবহারিক শিক্ষাও। কেউ ব্যবসা প্রশাসন পড়লে তাকে পাশাপাশি প্রযুক্তির জ্ঞানটাও অর্জন করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি বিশেষভাবে আপ্লুত এখানে এসে যে, এটি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। সকল গ্র্যাজুয়েটকে তাদের কর্মক্ষেত্রে অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে। আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে আপনারাই এগিয়ে আসবেন প্রত্যাশা করি। আপনাদেরকে সঠিক কাজটি করতে হবে।’
সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য দেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন আয়োজিত হচ্ছে। উপাচার্য হিসেবে আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আজ যারা চূড়ান্ত সনদ পাচ্ছো তারা ভবিষ্যতে সফল হলেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা।’
বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ রাষ্টপতির ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। শিক্ষার্থীদের সনদ প্রাপ্তি উদযাপনে সন্ধ্যার পর আয়োজন করা হয় কনসার্ট। যেখানে উপস্থিত আছেন নগর বাউল জেমস।