বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
সরকারী করণের পর বেশির ভাগ সময় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগেইে আছে তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
সরকারী করণের ৩৪ বছরের মধ্যে ১ জন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহাকরী প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদটি কিছুদিনের জন্য পূরণ হয়। যতদিন দু’জন প্রধান শিক্ষক দায়িত্বভার পালন করে গেছেন ততদিন কিছুটা দ্বন্দ্বের অবসান ছিলো তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিধ্যালয়ে কর্মরত সহাকারী শিক্ষকদের মধ্যে।
জানা যায়, ১৯৫০ সালে তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করা হয় এবং ১৯৮৭ সালে সরকারী করণ করা হয়। সরকারী করণের পর থেকে বিদ্যালয়ে দেখো দেয় শিক্ষক সংকট। সেই সাথে বেশির ভাগ সময় প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষকরা দায়িত্বভার গ্রহণ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। দ্বন্দ্বের কারণে সমযে সময়ে একাধিক শিক্ষক ইচ্ছে করেই অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ফলে শিক্ষক সংকট একটা চরম আকার ধারণ করে তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
শুরু থেকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকে তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। শুরুতে ভার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে তা প্রকট আকার ধারণ করেনি। এভাবেই কানাঘোষা করে শিক্ষকরা চলতে থাকেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে জুলাই মাসে ১৬ তারিখ আমিনুল ইমলাম নামে একজন প্রধান শিক্ষক যোগদান করেন এবং একই বছরে ২৫ নভেম্বর তিনি অন্যত্র বদলি হযে চলে যান। চলে যাওয়ার পর বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোশারফ হোসেন দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষক আব্দুল করিম ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মোশারফ হোসেন এর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। তার জেরধরে শিক্ষক আব্দুল করিম সুনামগঞ্জ বদলি হয়ে চলে যান। দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষককে পদায়ন করেন এবং মার্চ মাসে আব্দুল হেলিম ফকির নামে একজন সহকারী প্রাধান শিক্ষক তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের পর ২০১৭ সালে ২০ জুন তিনি আবার অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে আবার সিনিয়ার শিক্ষক মোশারফ হোসেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দাযিত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মোশারফ হোসেন বদলি নিয়ে ২০২১ সালে মার্চ মাসে নিজ এলাকয় চলে যান। চলে যাওয়ার পর বিদ্যালয় সিনিয়র শিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে দায়িত্বভার গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু জাহিদুল করিম দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নি। গ্রহণ না করায় বিদ্যালয়ে কর্মরত ৩ শিক্ষকের মধ্যে সদ্য চাকুরীপ্রাপ্ত এনায়েত হোসেন রনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সম্প্রতি বিদ্যালয় শিক্ষক সংকট সহ নানা সমস্যা জর্জরিত সংবাদ প্রকাশের পর জেলার জগান্নাথপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জামাল উদ্দিন নামে একজন সহকারী শিক্ষককে বদলি করা হয় তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। ২৯ এপ্রিল ২০২১ সালে তিনি তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ে অপর শিক্ষক জাহিদুল করিম বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযাগ করেন জৈষ্ঠ্যতা ডিঙ্গিয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ে আবার ৩ শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। ১ জন অসুস্থ থাকায় তিনি কোন পক্ষই অবস্থান নিচ্ছেন না।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১১টি পদের বিপরীতে কর্মস্থলে রয়েছেন ৪ জন। ১ জন শিক্ষক দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সিলেট আলীয়া মাদাসায় ডেপুটেশনে রয়েছেন। এ অবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে সময়ে সময়ে দ্বন্দ্ব বিদ্যালয়ে ছাত্র অভিভাবকদের মাঝে আরো দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
বিদ্যালয় ছাত্র অভিভাবক মধ্য তাহিরপুর গ্রামের খেলু মিয়া বলেন, বছরের পর বছর শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে শিক্ষক সংকটও রয়েছে। সব মিলে সরকারী উচ্চ বিদ্যালযের অবস্থা নাজুক।
তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক জাহিদুল করিম বলেন, বিদ্যলয়ে বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক কর্মরত আছি। এর মধ্যে আমি জৈষ্ঠ। সে হিসেবে আমার দায়িত্ব পাওয়ার কথা।
তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রাধান শিক্ষক মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, আমার পূর্বে বিদ্যালয়ের সদ্য চাকুরিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেছেন। আমি এখানে যোগদানের পর বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহিদুল করিম সাহেব কে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পেয়ে আমি তাকে আসতে বলি। আসার পর থেকেই তিনি জৈষ্ঠতা লংঘন বলে বিভিন্ন জায়গায় আমার নামে অভিযোগ করছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ডিডি সিলেট জাহাঙ্গীর আলম কবির এর সাথে, তিনি বলেন আমরা বিষয়টি অবহিত আছি। প্রধান শিক্ষক পদায়নের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমারা এ বিষয়ে লিখিত ভাবে ডিজিকে অবহিত করোব।