কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা শহর ও গ্রামের তফাৎ কমিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারণের মাধ্যমে মজবুত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের গৃহীত বহুমুখী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেছেন, ধনী ও গরিবের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস এবং প্রান্তিক জনগণের সুরক্ষায় আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আমাদের উন্নয়ন ভাবনা হচ্ছে- সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন ও সবার উন্নয়ন। উন্নয়ন ভাবনার এ আদর্শ সামনে রেখে দারিদ্র্যবিমোচন এবং ধনী-গরীবের মধ্যে বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র, ’১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে ত্রিশ লাখ গণশহীদ চিহ্নিত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরে ৯ মাসব্যাপী স্বাধীনতাযুদ্ধে সারাদেশের ত্রিশ লাখ গণশহীদ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এ লক্ষ্যে কার্যক্রম করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার তথ্য সংগ্রহ করে প্রস্তুতপূর্বক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সরকারদলীয় এমপি অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশিত তালিকার বাইরে যদি কোন মুক্তিযোদ্ধা থেকে থাকেন, তা শনাক্ত করে উক্ত তালিকায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে।
সংসদ নেতা জানান, উক্ত তালিকার অংশ হিসেবে বর্তমানে মোট ৫ হাজার ৭৯৫ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম, ঠিকানা সংবলিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে গেজেটভুক্ত বেসামরিক শহীদ ২ হাজার ৯২২, গেজেটভুক্ত সশস্ত্র বাহিনী শহীদ ১ হাজার ৬২৮, গেজেটভুক্ত বিজিবি শহীদ ৮৩২ এবং গেজেটভুক্ত শহীদ পুলিশ ৪২৪।
তিনি জানান, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের হাতে নিহত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত গণকবরসমূহ সংরক্ষণ করার বিষয়ে আমাদের সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর শনাক্তকরণের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের গৃহীত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ২৮১ বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে।
প্রতিটি গ্রামে আধুনিক সুবিধা : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা অনুধাবন করেছিলেন যে, গ্রামীণ উন্নয়ন ব্যতীত উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্য আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-’২১ ঘোষণা করি। রূপকল্প-’২১-এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো- গ্রামীণ দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনের আগে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ-এ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছি। যার স্লোগান হলো- আমার গ্রাম- আমার শহর। এলক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে আমরা গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছি। আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার হলো- প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহরের সুবিধা সম্প্রসারণ। এ লক্ষ্যে আমরা গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশক ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। গ্রামীণ জনগণের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। দেশের নগর উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
আইসিটি উন্নয়নে চার স্তম্ভের উদ্যোগ : গণফোরাম এমপি মোকাব্বির খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে একটি আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বিগত দুই মেয়াদে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়ন ও কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গবর্মেন্ট এবং আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন এই চার স্তম্ভের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রম গ্রহণ করে সফল হয়েছি।
তিনি বলেন, মহাশূন্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সফল উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। ইউএন ই-গবর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচক অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে ১৫০তম অবস্থান হতে ’১৮ সালে ১১৫তম অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ’১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়।
মুজিববর্ষ পালনে ব্যাপক কর্মসূচী : ’২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে আমার নেতৃত্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি জানান, জাতীয় পর্যায়ের এই দুটি কমিটির অধীন আটটি উপ-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় কমিটির একটি ও বাস্তবায়ন কমিটি দুটি সভাসহ মন্ত্রী পরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সকল সচিবকে নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া সরকারের সব মন্ত্রণালয়/বিভাগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ করছে।
স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হবে : জাতীয় পার্টির এমপি ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানান, দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য বীমা চালু করার পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য টাঙ্গাইল জেলায় মধুপুর, ঘাটাইল এবং কালিহাতি উপজেলায় ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্য বীমা কার্যক্রম চালু করেছি।
দক্ষতা উন্নয়নে ই-নথির প্রবর্তন : সরকারদলীয় এমপি মমতাজ বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়নে নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২০-২১ ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এমডিজি) আলোকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জনপ্রশাসনকে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার লক্ষ্যে আমরা ই-নথি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছি। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মাধ্যমে জনপ্রশাসনে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের ই-নথি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া গণমুখী প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছি।