এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা

47

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের সংশি¬ষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। জারিকৃত ২৯ গ্রেফতারী পরোয়ানা আজ রবিবার সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানোর কথা রয়েছে আদালতের।
গত বুধবার বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর পরদিন বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন বলে জানিয়েছেন মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান।
গ্রেফতারী পরোয়ানারকৃত ২৯ আসামীরা হচ্ছে, সিলেট সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ, আবু সরকার (শ্রমিক লীগ নেতা), জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, মৃদুল কান্তি সরকার, কামরুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, বাবলা, আতিকুর রহমান, লায়েক আহম্মেদ, সিদ্দিক আহম্মেদ ইউসুফ, জহিরুল ইসলাম, আক্তারুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, আসাদুজ্জামান শাহীন, মোহাম্মদ বিন মামুন বুলবুল, আউলাদ, আছরাফ আহমেদ শিপন, নজরুল ইসলাম, অলিউল¬াহ ওরফে ওলিউর রহমান, খুরশেদ আলম, বাছিদ ওরফে আবদুল বাছিদ, আবদুস সালাম, ইমতিয়াজ রফিক চৌধুরী, আবদুল¬াহ ফারুক, কয়েছ ওরফে কয়েছুজ্জামান তালুকদার, আবু রেহান, রুবেল ও জ্যোতির্ময় দাস সৌরভ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৮ জুলাই ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস। এই ঘটনায় এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। ছাত্রাবাস দেখতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের কান্না সে সময় গণমাধ্যকে বড় খবর হয়ে আসে। ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় হল সুপার বশির আহমদ বাদী হয়ে শাহপরান থানায় ২০১২ সালের ১৩ জুলাই মামলা করেন। পরে এ ঘটনায় আরও দুটি মামলা করা হয়। পুলিশ শুরুতে যে তদন্ত করে, তাতে ছাত্রলীগের নাম আসেনি। আর পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআইয়ের তদন্তের পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের বিরোধের কারণেই মূলত এই নাশকতা চালানো হয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে। তবে সাক্ষীদের বক্তব্য, ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র, জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ছাত্রাবাসে আগুনের ঘটনা ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের বিরোধের কারণেই সংঘটিত হয় বলে উল্লে¬খ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমত ছাত্রলীগের কর্মী উজ্জ্বল আহমদকে ছাত্র শিবিরের কর্মীরা গুরুতর জখম করায় তাৎক্ষণিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মৌখিক ও দালিলিক সাক্ষ্য বিচার বিশে¬ষণে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। ছাত্রাবাসে আগুন দিতে গ্যালনে করে পেট্রোল ব্যবহার করা হয় বলেও জানান হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। পরে ছাত্রাবাস কক্ষ লুটপাটও হয়।
আলোচিত এ মামলার রহস্য উদঘাটন করতে আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেটের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে। সিআইডি ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে প্রথমবার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে আদালত এ প্রতিবেদন গ্রহণ না করে আবার তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর আবার তদন্ত করে সিআইডি ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট ফের আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনও আদালত গ্রহণ না করে পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মাধ্যমে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) দুই বার ও বিশেষায়িত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে অপরাধী শনাক্ত না হওয়ায় আলোচিত এ মামলার ভবিষৎ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। পরে এ মামলার জট খুলতে গত ৩১ মে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সারাবন তহুরা।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এম এ ওয়াহাব বলেন, আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো পুলিশের হাতে পৌঁছেনি। পরোয়ানা হাতে পাওয়ামাত্র আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হবে।