জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতের কার্যক্রম শুরু হলে দেশবাসী আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্তীকালে এই পরিচয়পত্রের নম্বর নাগরিকদের নানা কাজে সংযুক্ত করার বিধান গড়ে ওঠে। মানুষও এতে অভ্যস্ত হয়ে যাান। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে জালিয়াতি বা দুর্নীতি হবে না এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত। কেননা ভুয়া পরিচয় দিয়ে পরিচয়পত্র তৈরি হলে ওই পরিচয়পত্রধারী নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হলে তাকে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। দেশের নাগরিক না হয়েও কোন ব্যক্তি, সে রোহিঙ্গা হোক বা ভিন্ন কোন দেশের নাগরিক হোক, বাংলাদেশী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবে। এখন পাসপোর্টেও এই পরিচয়পত্র নম্বর যুক্ত করার বিধান রয়েছে। ফলে ভুয়া এনআইডি কাজে লাগিয়ে পাসপোর্ট গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ভিনজাতি ও ভিনদেশীদের অন্য দেশে ভ্রমণ ও অবস্থানের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এতে দেশের ভাবমূর্তিই বিপন্ন হবে। এনআইডি জালিয়াতি আগেও হয়েছে, তবে এর পেছনে বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী চক্র, এ মর্মে সংবাদ উদ্বেগজনক।
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছে নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, এমন অভিযোগ আশঙ্কাজনক। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এরা দেশব্যাপী গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসায় সমালোচনার মধ্যে পড়েছে ইসি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এনআইডি ও ভোটার নিবন্ধনে জালিয়াতি বন্ধে মাঠপর্যায়ে যদিও কড়া বার্তা দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। তবু শঙ্কা দূর হচ্ছে না। এনআইডি সংক্রান্ত দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। ভাল কথা। কিন্তু অনেক আগেই সচেতন হওয়া প্রত্যাশিত ছিল। অবশ্য এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের ছাড় দেয়া হবে না। প্রতিটি ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মাঠপর্যায়ে অনিয়ম রোধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনায় দুটি করে তদন্ত কমিটি করা হচ্ছে।’
দেশের ১০ কোটি ৯৮ লাখ নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত আছে যেখানে, নানা অনিয়মের কারণে সেই এনআইডি সার্ভারের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এটি অভাবিত ও দুঃখজনক। ইতোপূর্বে বলা হয়েছে, ইসির কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ সুরক্ষিত। উপজেলা পর্যায়েও সার্ভারে ৫ স্তরের নিরাপত্তা সিস্টেম চালু রয়েছে। কিন্তু এত পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন সময়ে ইসির কড়া বার্তা সত্ত্বেও তাদের অনিয়মের পথ থেকে ফেরানো যাচ্ছে না কেন?
কোনভাবেই দেশের বন্ধু হতে পারে না। তাই তাদেরকে শক্তভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে তাদের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত জাল পরিচয়পত্রগুলোর তথ্য দেশের সব থানা ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে সংরক্ষণ করতে হবে। একজনও যেন ভুয়া পরিচয়পত্র নিয়ে ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্যে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া চাই।