কাজিরবাজার ডেস্ক :
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে চালু থাকা মোবাইল সিম যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ টেলিযোযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার করে ক্যাম্পে থাকা গ্রাহকদের এসএমএস দিয়ে তাদের নিবন্ধিত সিমের শেষ চারটি ডিজিট জানতে চাওয়া হবে। গ্রাহক যদি ফিরতি এসএমএসে সঠিকভাবে শেষ চার ডিজিট জানাতে পারেন, তাহলে তার সিম চালু থাকবে। আর যদি কোন গ্রাহক ফিরতি এসএমএস না দেন তাহলে তার সিম সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করা হবে মোবাইল টিভি (আইপি টিভি)। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত এসব টিভির মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নানা খবর ‘লাইভ’ প্রচার করা হয়। আইপি টিভি বন্ধ হলে রোহিঙ্গাদের তৈরি করা নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে পড়বে।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, এ মাসের প্রথম দিকে বিটিআরসি কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করতে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে নির্দেশনা দেয়। পরে ওইসব এলাকায় নতুন সিম বিক্রি বন্ধ করাসহ একই সঙ্গে ওই এলাকায় থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করা হয়। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাসহ বিটিআরসির একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে রোহিঙ্গারা কিভাবে মোবাইল সিম পাচ্ছে সে সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। প্রতিনিধি দল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকেও নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রতিনিধি দল সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা বিটিআরসির কাছে তুলে ধরেন। পরে বিটিআরসির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিম যাচাই-বাছাই করা হবে। আগামী মাসের শুরু থেকেই এই কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে দেশে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা এসেছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের হাতে ৫ লাখের বেশি মোবাইল ফোন রয়েছে। এসব মোবাইল ফোন বেশিরভাগই ‘এন্ড্রয়েট’। উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় মোট ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প আছে। তারা থ্রিজি-ফোরজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যাচ্ছে। এ সব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নানা অপকর্মের সঙ্গে তারা জড়িয়ে গেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগও আছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনার কাজও করছে মোবাইল ব্যবহার করে। এ ছাড়া মিয়ানমারেও বাংলাদেশী মোবাইল অপারেটরের সিম ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে বিটিআরসি অপারেটরদের সীমান্তের কাছাকাছি মোবাইল টাওয়ারের নেটওয়ার্ক সীমিত করারও নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে সৌদি আরব, পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে আইপি টিভি পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব আইপি টিভির পরিচালনা করছে প্রবাসে থাকা রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গারা ভিডিও ফুটেজ ও ছবি প্রতিমুহূর্তে পাঠাচ্ছে ওইসব চ্যানেলে। পরে ভিডিওগুলো সম্পাদনা করে কণ্ঠ দিয়ে খবর প্রচার করা হয়। প্রতিটি খবরেই মূলত রোহিঙ্গাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং কোন অবস্থাতেই শর্ত না মানলে মিয়ানমার না যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে ‘আরাকান টাইমস’, ‘রোহিঙ্গা নিউজ’, ‘আরাকান টুডে’, ‘রোহিঙ্গা টিভি’ নামের আইপি টিভির খবর মিলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তত ১০টি আইপি টিভির সন্ধান পেয়েছে তারা। এসব টিভিতে প্রতিদিন সংবাদ সম্প্রচার হচ্ছে। ওয়েবসাইট ও ফেসবুকের পাশাপাশি এসব টিভি ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচার হচ্ছে। এসব টিভির ফেসবুক পেজে লাখ লাখ লাইক আছে। ইউটিউব চ্যানেলেও লাখ লাখ লাইক দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। নিজেদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আর খবর আদান-প্রদানে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। টেকনাফ ও উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে রয়েছে ইন্টারনেটসব উন্নত সব ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার। এখানে থ্রিজির পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ও ডিশ সংযোগও দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গাদের রয়েছে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ। এসব গ্রুপ ও পেজে সার্বক্ষণিক ছবি, ভিডিও এবং লেখা আপলোড করা হচ্ছে। ফলে যে কোন ঘটনাই মুহূর্তের মধ্যে সব রোহিঙ্গাই জেনে যাচ্ছে।
বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে ইন্টারনেট চলতে না পারে তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইন্টারনেটের কারণে সেখানে আইপি টিভি থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তির সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। ফলে তারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের কারণে সারা দুনিয়ায় তাদের যোগাযোগ রয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গেও তাদের যোগযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা মিয়ানমার থেকে বড় বড় ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। তারা যাতে কোন অবস্তাতেই মোবাইল সিম না পায় সে জন্য সব মোবাইল অপারেটরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মোবাইল টাওয়ারগুলোও অপসারণের জন্যও বিটিআরসি অপারেটরদের বলেছে। তবে সবার আগে সেখানে মোবাইল সিম যাচাই-বাছাই করে অবৈধ সিম বন্ধ করা হবে। ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করে দিতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা কমিয়ে আনতে থ্রিজি ফোরজি নেটওয়ার্ক সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে। কোন কোন সময় দিনের বেলাও ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।