ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক

14

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু বাস্তব কারণে তিস্তা চুক্তি না হলেও অনেক অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে চুক্তি হয়েছে ও হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে স্থল, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের সঙ্গে অতীতে যে আকাশচুম্বী বাণিজ্য ঘাটতি ছিল তা অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে। সীমান্ত হত্যা এখনো শূন্যের কোঠায় নামানো না গেলেও অতীতের তুলনায় অনেক কমেছে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। মানুষে মানুষে সম্পর্কও এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তার পরও এ দেশের একটি চিহ্নিত মহল তাদের রাজনীতির প্রধান পুঁজি ভারত বিরোধিতা নিয়ে প্রায়ই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। সম্প্রতি তারা ভারতের নাগরিকত্ব আইন ও তজ্জনিত কিছু ঘটনাবলি নিয়ে সরব হওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বাংলাদেশ সফর নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করছে। অথচ ভারত বরাবরই বলে আসছে, ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। একজন মানুষকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না। তার পরও কিছু মানুষ তা নিয়ে ভারতবিরোধী উসকানি প্রদানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা সফররত ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা স্পষ্ট করেই বলেছেন, ভারত এমন কিছুই করবে না, যাতে দুুই দেশের সম্পর্কে ছায়া পড়ে। পরোক্ষ বা অনিচ্ছাকৃত প্রভাব দেখা দিলেও দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে। অন্য সাতটি নদীর পানিবণ্টন নিয়েও এ বছরের মধ্যেই চুক্তি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যে এটাই স্পষ্ট হয় যে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পকের বিষয়টিকে কত বেশি গুরুত্ব দেয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ১৭ মার্চ ঢাকায় আসছেন। দুই দিনের এই সফরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। আমরা আশা করি, সেই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। অমীমাংসিত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের পথ তৈরি হবে। আমরা চাই, পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো এগিয়ে যাক। ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, কোনো অপশক্তির কর্মকাণ্ডই দুই দেশের সম্পর্কে কালো ছায়া ফেলতে পারবে না। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এ দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, তাকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না।