কথা বলছে গাছ শুনতে ছুটছেন মানুষ

14

কাজির বাজার ডেস্ক

গাছ কথা বলছে- এমনটি শুধু গল্পে বা উপন্যাসেই শোনা যেত। তবে এবার এমন অলৌকিক গল্পের পিছনে ছুটে চলছে অসংখ্য মানুষ। অলৌকিক এই ঘটনা দেখতে ও গাছের সঙ্গে কথা বলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। গাছের ভেতর থেকে পুরুষ নয়, শোনা যাচ্ছে নারীকণ্ঠ। ঘটনাটি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গর্জিনা গ্রামের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, (উপজেলার গর্জিনা গ্রামে সৌদি প্রবাসী সবুর মিয়ার গাছের বাগান রয়েছে। গত শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে ওই বাগানের একাশিয়া গাছ (স্থানীয়দের ভাষায় লম্বুগাছ) কাটতে যায় ওই গ্রামের জুয়েল মোল্লার ছেলে নীরবসহ (১০) কয়েকটি শিশু। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গাছটি কাটতে শুরু করলে কথা বলতে শুরু করে গাছটি। এ সময় ওই শিশুরা ভয় পেয়ে বাড়ি গিয়ে পরিবারের লোকজনের কাছে জানালে তারা গাছটি দেখতে আসেন। তারা গাছের গায়ে কান পেতে রাখলে গাছের ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পান।
এরপরই এলাকায় শুরু হয় চাঞ্চল্য, অলৌকিভাবে গাছ কথা বলে- এমনটি অপ্রচারের ডালপালা ছড়াতে থাকে এলাকায়। চাঞ্চল্যকর এই সংবাদটিকে সত্য ভেবে গাছটি দেখতে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বরিশাল, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে লোক আসতে থাকেন গর্জিনা গ্রামে। তারা গাছের সঙ্গে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করেন। অনেকে আবার গাছের ওপরে উঠে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করেন।
গাছ কথা বলে- এমন প্রচারের পর সাধারণ মানুষ আসতে শুরু করলে একটি মহল গাছটির চারপাশে বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেয়। পরে এটি ব্যবসা উল্লেখ করে সেই বাঁশ ভেঙে দেয় কয়েকজন স্থানীয় যুবক। গাছের গায়ে গোবর দেওয়ার কারণে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়ে বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা।
গর্জিনা গ্রামের মামুন মল্লিক বলেন, ‘গ্রামের কয়েক শিশু এই গাছটি কাটতে আসে। গাছের গায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিলে আমাকে মারিস না, আমাকে মারিস না বলে গাছের ভেতর থেকে কথা বলে ওঠে। পরে ওই শিশুরা বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি বলে। পরে তারা এসে গাছের ওপর কান পাতলে শব্দ শুনতে পায় এবং বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে মানুষ দলে দলে এ গাছটি দেখতে আসছে।’
গাছ দেখতে আসা রাঘদি গ্রামের মো. লিয়াকত বলেন, ‘গাছ কথা বলেছে এমনটি শুনে এখানে এসেছি। পরে এক ভাইয়ের বিয়ে হবে কি-না এমনটা জানতে চাইলে গাছের ভেতর থেকে হু করে শব্দ করেছে।’
মুকসুদপুর উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামের পিংকি আক্তার বলেন, ‘গাছ কথা বলে এমনটি শুনে দেখতে এসেছি। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও এখানে এসে গাছের গায়ে কান পেতে দেখি এটা বাস্তব।’
স্থানীয় রাঘদী ইউপি মেম্বার সাদ্দাম হোসেন বলেন, আগন্তুক ও কৌত‚হলী মানুষ প্রতিদিনই গাছের গায়ে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করছেন। শুধু বড়রাই নয়, কথা শোনার চেষ্টা করে শিশুরাও। এতে অনেক দর্শনার্থী গাছের কথা শুনতে পান দাবি করে এটিকে অলৌকিক বলছেন।
গাছটি দেখতে প্রতিদিনই শত শত মানুষ ছুটে আসায় কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সে বিষয়ে প্রশাসন আগেভাগেই ব্যবস্থা নেবে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।
তবে অনেকেই গাছ কথা বলে অস্বীকার করে এটি জিনের কাÐ হতে পারে বলে জানান।
গর্জিনা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ বাদশা বলেন, ‘এটা কুসংস্কার। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সঠিক নয়। ধারণা করছি কোনো জিনকে গাছের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। যে কারণে জিন বাইরে বের হওয়ার জন্য এমনটি করছে।’
সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও উদ্ভিদ বিভাগের প্রধান শুকলাল বিশ্বাস বলেন, ‘গাছ কথা বলে এটি সম্পূর্ণ গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ শব্দ করতে হলে তার ভোকাল সিস্টেম থাকতে হবে। জড় বস্তুর আঘাতজনিত কারণে শোঁ শোঁ শব্দ হয়। তবে এমনি সালামের উত্তর দেওয়া এটা আমার কাছে গুজবই মনে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা ঠিক গাছের প্রাণ আছে, কোষ দ্বারা গঠিত, কোষ একটি জীবন্ত সত্তা। তবে প্রাণী চলাচল করতে পারে, উদ্ভিদ চলাচল করতে পারে না। তবে উদ্ভিদের ব্যথা-বেদনা, দুঃখ সবই আছে। তবে কথা বলে এটি আমি প্রথম শুননাল, এটি পুরোটাই গুজব।’