কারিগরি শিক্ষায় সময়োপযোগী উদ্যোগ

16

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে নাগরিক মহল থেকে শুরু করে শিক্ষাবিশেষজ্ঞ মহল পর্যন্ত। পাঠক্রম, পাঠপদ্ধতি, পাঠ-পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষাঙ্গন, পাঠের উপযোগিতা প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়। বড় সমালোচনার বিষয় হচ্ছে, শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী, বাস্তবমুখী করে তোলে কি না। শিক্ষাবিদরা মতে, সাধারণ শিক্ষা অবশ্যই দরকার, তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর অতিক্রমের পর ক্রমান্বয়ে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার পরিসর বাড়াতে হবে। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এ জায়গায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কর্মদক্ষ করে তোলার বিষয়টিকে এখনো যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। সমাজেও এবিষয়ক তাগিদ ও সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফলে কারিগরি খাতে পর্যাপ্ত দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না।
বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষায় দৃষ্টিপাত করলেও তা যথেষ্ট নয় এখনো; সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবও রয়েছে। তার পরও চেষ্টা যে রয়েছে, সেটা স্বস্তিদায়ক বিষয়। অতিসম্প্রতি সরকার দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ৩২৯টি উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) নির্মাণের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। কারিগরি শিক্ষায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি; বাস্তবায়নে খরচ হবে ২০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে। একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। গুরুত্ব অনুধাবন করে কারিগরি স্কুল ও কলেজগুলোতে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি।
সভার পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যার বোনাসকালে রয়েছে। এখন কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাই বেশি। বিশাল জনগোষ্ঠীকে কারিগরি শিক্ষা দিয়ে দক্ষ করে তোলার জন্যই সরকার ৩২৯টি উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণ হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতেও দক্ষ, প্রশিক্ষিত জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেওয়া হবে। দেশে কারিগরিসংক্রান্ত শিক্ষকের অভাব আছে। প্রয়োজন হলে প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষকদের বিদেশ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা চলছে। এটি নানা ধরনের শিক্ষাপদ্ধতির জগাখিচুড়ি। এ ব্যবস্থায় সমন্বয় আনা অতি জরুরি। পাশাপাশি যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো শিক্ষায় প্রায়োগিক বিষয়াদির ওপর জোরারোপ করা। সেটা করতে হলে কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। এ নিরিখে সরকারের উদ্যোগটি সময়োপযোগী। এ উদ্যোগ যথাসময়ে এবং সুচারুভাবে সম্পন্ন হলেই দেশ-জাতির মঙ্গল।