কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈরী পরিবেশে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই। দেশে উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বিশেষ করে পচাত্তরের পর বিরাট অবদান রেখে গেছেন সেই সমস্ত ছাত্র নেতারা চলে (মারা) যচ্ছেন।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে আনীত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি। আলোচনার পর শোক প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবদুল মান্নান পরপর ৩ বার সংসদ সদস্য ছিলেন। ঠিক মৃত্যুর দু’দিন আগেই তার সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে না পারায় তার মনে একটু দুঃখ ছিল। আমি বলেছিলাম তুমি আমাদের দলে আছো এবং থাকবে। তোমাকে তো আমি মনোনয়ন দিয়েছি। তুমি সংসদ সদস্য হয়েছো। আমি বললাম- তোমার শরীরটা মনে হয় খারাপ। তুমি চিকিৎসা নাও। হাসপাতালে ভর্তি হও। ঠিক তার পরপরই সে হাসপাতালে ভর্তি হলো। আমি হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে কথা বলতাম। যেদিন তিনি মারা গেলেন সেদিন রাত ৯টার সময় আমি ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। সেদিনই ডাক্তার আপা আমাকে বললেন, আপা ওর অবস্থা কিন্তু ভালো না। আমরা কিছু করতে পারবো না। অবস্থা এমন হয়ে গেছে তাকে যদি বাইরে পাঠাতে পারি, কিন্তু বাইরে পাঠানোর মতো অবস্থাও তার নেই। পরেরদিন সকালবেলায় তার মৃত্যুর খবর পেলাম।
প্রধানমন্ত্রী আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, এটা দুঃখজনক। ছাত্রজীবন থেকেই বিরোধী আন্দোলন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, খালেদা বিরোধী আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শওকত, ওয়ালি, মহসিনকে পিটিয়ে হত্যার মতো জঘন্য হত্যাকাণ্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এরশাদ আমলে ট্রাক চাপা দিয়ে মারা হলো, আরও বহু ছাত্র কর্মী বিভিন্ন সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।
বিভিন্ন সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের তালিকা দিতে গেলে বহু সময় লাগবে। একটি বৈরী পরিবেশে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, বিশেষ করে বগুড়ায় নির্বাচনে জেতা কঠিন ছিল। যে কারণে আমি বারবার ওই এলাকায় গিয়েছি। নদী ভাঙন থেকে শুরু করে রাস্তা-ঘাট করা অনেক উন্নয়নের কাজ এলাকায় করা হয়েছে। আমরা যখন উন্নয়ন করি তখন সব জায়গায় সমান ভাবেই করি। জায়গার সঙ্গে আমাদের কোনও বৈরিতা নাই। সারা বাংলাদেশে আমরা উন্নয়ন করি। সে যখনই যে কাজ নিয়ে এসেছে সে কাজ করে দিয়েছি। সে এভাবে চলে যাবে সত্যিই খুব কষ্টকর। আজ তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি ওকে যেন বেহেশত নসিব করে। সে আমাদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। অত্যন্ত দক্ষ, মেধাবী ছিল। আমাদের প্রচার সম্পাদক থাকার সময় প্রতিদিন লিফলেট বিবৃতি লেখাতাম তাকে নিয়ে। সে চমৎকারভাবে সেগুলো লিখতো। যখন যে কাজ দিয়েছি খুবই দক্ষতার সঙ্গে সে কাজগুলো করতে পেরেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাতে গড়া ছাত্রনেতারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে। আমরা যখন থাকবো না তখন দেশ ও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারা যদি চোখের সামনে চলে যায় সত্যিই দুঃখজনক। এভাবে বিভিন্ন নেতার মৃত্যুবরণ দেশের জন্য ক্ষতিকারক যদিও আমি তো অবধারিত।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অংশ নেন সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গা, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, এক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সরকারি দলের মহিউদ্দিন খান আলমগীর, উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মৃনাল কান্তি দাস, মোসলেম উদ্দিন, নজরুল ইসলাম বাবু, আনোয়ার আবেদীন খান, তাজুল ইসলাম।