বিশ্ব ইজতেমা শেষ ॥ আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

30

কাজিরবাজার ডেস্ক :
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভের আশায় মহান আল্লাহর দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন, আল্লাহুমা আমিন, ছুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হয়েছে তবলীগ জামাতের এবারের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা। মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য কেঁদে বুক ভাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কামনা করা হয়। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। ইজতেমার এ পর্বে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীরা অংশ নেন। আখেরি মোনাজাত শুরুর আগে মাওলানা জোবায়ের অনুসারীদের মতো সা’দ অনুসারীদের আগামী ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা দু’পর্বে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বিশ্ব তবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের নিজামউদ্দিন মারকাজের হযরত মাওলানা জমশেদ রবিবারের এ মোনাজাত পরিচালনা করেন। তিনি বেলা ১১টা ৪৯ মিনিট থেকে ১২টা ০৬ মিনিট পর্যন্ত ১৭ মিনিট স্থায়ী মোনাজাত পবিত্র কোরানে বর্ণিত দোয়ার আয়াত এবং উর্দু ভাষায় পরিচালনা করেন। তাৎপর্যপূর্ণ এই আখেরি মোনাজাতে জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। মোবাইল ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।
রবিবার আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে শুরু হয় ইজতেমামুখী ধনী দরিদ্র যুবক বৃদ্ধ নির্বিশেষে লাখো মানুষের ঢল। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে হেঁটে মুসল্লিরা ধাবিত হয় ইজতেমা ময়দানে। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। রবিবার ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস- দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদের নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাক্সিক্ষত আখেরি মোনাজাত। আখেরি মোনাজাতের জন্য রবিবার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।
পরবর্তী বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা : তবলীগ জামাতের মাওলানা জোবায়ের অনুসারী আলেম ওলেমা কওমিপন্থী এবং মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তবলীগ অনুসারীদের মতবিরোধের কারণে গত বছরের ন্যায় এবারের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমাও দু’পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ হতে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এতে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারীরা অংশ নেন। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগে ইজতেমার বয়ান মঞ্চ থেকে আগামী ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার পৃথক সময়ে দুই পর্বের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
আরও তিন মুসল্লির মৃত্যু : এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে আসা আরও তিন মুসল্লি মারা গেছেন। এদের মধ্যে শনিবার রাতে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার চাঁদপাড়া দুর্গাদাহ এলাকার মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে মোঃ শাহ আলম (৬৫) ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার খাদিমপুর এলাকার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ফজলুল হক (৬৮) এবং শনিবার সকালে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার আজিম নগর এলাকার মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে মোঃ মনির হোসেন (৪০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ নিয়ে এ পর্বে মোট ১০ মুসল্লি মারা গেছেন। এর আগে প্রথম পর্বে ১৪ মুসল্লি মারা যান। জিএমপি’র উপ-কমিশনার মোঃ মনজুর রহমান জানান, এবারের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বে মোট ২৪ মুসল্লি মারা গেছেন। সড়ক দুর্ঘটনা, বার্ধক্য ও অসুস্থজনিত কারণে এ ২৪ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।