উন্নত বিশ্বের আদলে পুলিশ বাহিনী হোক

20

‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার পুলিশ হবে জনতার’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ শুরু হয়েছে। সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা সন্ত্রাস, মাদক, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এগুলো মোকাবেলা করছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’ এ কথা ঠিক যে নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের পুলিশ বাহিনী ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশের পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যের আবাসিক সুবিধা নেই। কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মসময় নেই। অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। পুলিশ অতিরিক্ত কাজ করলেও এর জন্য উপযুক্ত প্রণোদনা পায় না। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর মতো পুলিশেরও বছরে ৩৩ দিন করে অর্জিত ছুটি জমা হয়। পিআরএল বা অবসরে যাওয়ার সময় অন্য সরকারি কর্মচারীদের ন্যূনতম এক বছরের ছুটি জমা থাকতে হয়। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অবসর নেওয়ার আগে প্রায় সবারই অর্জিত ছুটি এক বছরের চেয়ে অনেক বেশি জমা থাকে। কিন্তু পিআরএল সুবিধা পেয়ে থাকে ওই এক বছরই। অথচ হাতে গোনা দু-একটি ঘটনা বাদ দিলে আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জীবন রক্ষায় কাজ করেছেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন সাম্প্রতিক সময়ে অনেক পুরনো মামলার তদন্তে যে সাফল্য দেখিয়েছে তা প্রশংসার্হ। পিবিআইয়ের ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এফআইভিএস) পরীক্ষায় মিলছে অজ্ঞাতপরিচয়ের লাশ।
যেকোনো দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সে দেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ। তারা যদি দক্ষ, দায়িত্বনিষ্ঠ ও সৎ হয়, তাহলে মানুষ নিশ্চিন্ত থাকে। সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো বাধা থাকে না। অন্যদিকে এর বিপরীতটি হলে মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার সীমা-পরিসীমা থাকে না। জননিরাপত্তার প্রধান দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে এক ধরনের ভীতিও রয়েছে, নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযোগের কিছুটা অংশও যদি সত্যি হয়, তাহলে এই পুলিশ বাহিনীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই।
পুলিশকে জনগণের বন্ধু বলা হয়ে থাকে। পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। দূর করতে হবে আস্থার সংকট। বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। উন্নত বিশ্বের আদলে পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তুলতে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেওয়াও এখন সময়ের দাবি।