বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিল্পে বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের অক্টোবরে তিনি দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ খুলে দেয়ার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংককে। তদনুযায়ী গত জানুয়ারিতে বিদেশে বিনিয়োগের নিমিত্ত একটি নীতিমালা তৈরি করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে গেজেট আকারে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের যেসব কোম্পানি বিদেশে পণ্য রফতানি করে তারা চাইলে এখন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করতে পারবে ৭টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে। ইতোমধ্যে দেশীয় চারটি প্রতিষ্ঠানকে, অধিকাংশই ওষুধ কোম্পানি, বিভিন্ন দেশে ১০ মিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোম্পানিগুলো বিদেশে উৎপাদিত পণ্য সে দেশে বাজারজাত এবং দেশে এনেও বিক্রি করতে পারবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রার আয় আরও বাড়ানো, দেশ থেকে মুদ্রা পাচার বন্ধ এবং বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থাপনা ও তদারকিতে আরও দক্ষতা অর্জন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে দেশীয় ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ ও অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক ও ব্যাস্টিক অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটেছে। এর জন্য ইতোমধ্যে মিলেছে বিশ্ব স্বীকৃতিও। হংকং-সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের গবেষণা সেল এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের নিরিখে (জিডিপি) ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কিত পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ১২ বছরের মধ্যে ১৬ ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় শূন্য থেকে। সে সময় বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান নিয়ে গড়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বিস্ময়কর এই উত্থান ও উন্নয়নের পেছনে প্রায় ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী ও মেধাবী প্রতিভা। যে কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত বহির্বিশ্বে।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণের তিনটি শর্ত পূরণ করেছে। ২০২৪ সাল নাগাদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। পদ্মা সেতুর মতো সুবৃহৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে আরও কয়েক ধাপ। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপকে ঋণ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি এক্ষেত্রে আরও একটি মাইলফলক অর্জন অবশ্যই।