মানবসম্পদ উন্নয়নের গুরুত্ব

1685

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

ম ানুষ মহান আল্লাহর সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি। এই মানুষকে কেন্দ্র করেই সমগ্র সৃষ্টিজগতের সকল আয়োজন। আধুনিককালে মানুষের জীবন কীভাবে আরো ফলপ্রসূ করা যায় তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ এই মানুষের উন্নয়ন সাধন করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত করতে হলে প্রয়োজন যথার্থ কৌশল প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন। আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনব্যবস্থা ইসলাম মানবসম্পদ উন্নয়নে কী কী নির্দেশনা দিয়েছে তা এই প্রবন্ধে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের পরিচয়, এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা বাস্তবায়নে জ্ঞান অর্জন, জীবিকা অর্জন, স্বনির্ভরতা অর্জন, কর্তব্য পালন, যোগ্যতা অর্জন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে ইসলামের গুরুত্বারোপ ও কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আরোপ বিষয়ে অত্র প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে পরকালীন চেতনা ও নৈতিকতার গুরুত্বকে দলীলসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রবন্ধের শেষাংশে নৈতিক উন্নয়নে ইসলামের নির্দেশনাসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধটি মূলত কুরআন ও হাদীসের বর্ণনাভিত্তিক একটি প্রাথমিক উপস্থাপনা।
মানবসম্পদ উন্নয়ন আধুনিক উন্নয়ন চিন্তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ ধারণা। বিশ শতকের শেষ দশকে এ ধারণার প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ ঘটে। বর্তমানে উন্নয়ন চিন্তার ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন ধারণাটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে এবং সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কিংবা অন্য যে উন্নয়নের কথাই বলা হোক, সকল উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানবসম্পদ। একে ঘিরে এবং এর জন্যই সকল উন্নয়ন প্রচেষ্টা। টেকসই উন্নয়ন, সমন্বিত উন্নয়ন ধারণা, সামগ্রিক উন্নতি বা সর্বাত্মক সুষম উন্নয়ন, সকল ক্ষেত্রে মানুষের সুখ-সুবিধাই মূল বিবেচ্য হয়ে থাকে। মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া প্রাকৃতিক, নৈসর্গিক বা পরিবেশগত কোনো সুবিধা গ্রহণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। বর্তমাান উন্নয়ন ধারায় প্রথমে তাই মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণকে আবশ্যিক বলে গণ্য করা হয়। ইসলাম গোড়া থেকেই মানবসম্পদ উন্নয়নকে সামগ্রিক উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান শর্ত হিসেবে গণ্য করেছে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলাম মানবকে সত্যিকারার্থে শ্রেষ্ঠতম সম্পদ বলে ঘোষণা করেছে এবং এর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিধি-ব্যবস্থাসমূহ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় মানব সম্পদ উন্নয়ন ধারণাটির বিকাশ ও বিস্তারে যে পরিমাণ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে এবং গুরুত্ব প্রদানের প্রেক্ষাপটে যে ফল লাভ হচ্ছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। এতে মানুষের বৈষয়িক উন্নয়ন কিছুটা হয়তো হচ্ছে, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ, সহানুভূতি, সহযোগিতা ও ভালোবাসা বস্তুগত অর্জনের কাছে প্রতিনিয়ত মার খেয়ে যাচ্ছে। মানবিক বিপর্যয়ের চালচিত্র প্রতিদিনই প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে, যা মানবসম্পদ উন্নয়ন ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এমতাবস্থায় মানবসম্পদ উন্নয়নে ইসলামের ভূমিকা বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন একান্ত আবশ্যক। এ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন মানবসম্পদ উন্নয়নে আধুনিক প্রচেষ্টার ব্যর্থতা এবং সফলভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নের পথ নির্দেশ করবে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচিতি : উন্নয়ন একটি মৌলিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া, যা সমগ্র সমাজকে অন্তর্ভূক্ত করে। এতে একটি সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং ভৌত কাঠামো, পাশাপাশি সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ ব্যবস্থা ও জীবন ধারণা পদ্ধতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিবর্তন সাধিত হয়। “উবাবষড়ঢ়সবহঃ রং ভঁহফধসবহঃধষষু ধ ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ পযধহমব ঃযধঃ রহাড়ষাবং ঃযব যিড়ষব ংড়পরবঃু – রঃং বপড়হড়সরপ, ংড়পরড়- পঁষঃঁৎধষ, ঢ়ড়ষরঃরপধষ ধহফ ঢ়যুংরপধষ ংঃৎঁপঃঁৎবং ধং বিষষ ধং ঃযব াধষঁব ংুংঃবস ধহফ ধিু ড়ভ ষরভব ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব”- ক. ঈ. অষবীধহফবৎ, উরসবহংরড়হং ধহফ ওহফরপধঃড়ৎং ড়ভ উবাবষড়ঢ়, ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ জঁৎধষ উবাবষড়ঢ়বসহঃ, ঠড়ষ.১২ (৩)- ঘওজউ, ঐুফবৎধনধফ, ওহফরধ, ১৯৯৩, ঢ়.২৫৭”
উন্নয়ন একটি ব্যাপক ধারণা, যা একটি সমাজকে বর্তমান অবস্থান থেকে অধিকতর কাম্য অবস্থানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত করে এবং এই কাম্য লক্ষটি নির্ধারিত হয় ঐ সমাজের জনগণের ইতিহাস অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান হতে। ‘‘মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিপ্রেক্ষিতে আমলাতন্ত্রের একটি পর্যালোচনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা, সংখ্যা ৬৮, অক্টোবর ২০০০, পৃ. ৫৫’’।  উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু মানুষ। এটি একটি পথ মাত্র, চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। যে উন্নয়নে মানুষের জীবন উন্নত হয় না বা যাতে মানুষের অংশগ্রহণ থাকে না, সে উন্নয়ন উন্নয়নই নয়। এ বোধই মানবসম্পদ উন্নয়ন ধারণার জনক, যার মূল কথা মানুষের উন্নয়ন, মানুষের জন্য উন্নয়ন এবং মানুষের দ্বারা উন্নয়ন। ‘সেলিম জাহান, অর্থনীতির কড়চা, ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ, ১৯৯৬, পৃ. ১০’’।
উন্নয়ন সম্পর্কিত নতুন এ ধারণাটির উদ্ভবের ফলে মানবিক দিকটি যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করে। বৈশ্বিকরণ প্রক্রিয়া জোরেসোরে উচ্চারিত হওয়ার সময়ও স্থিতিশীল ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের সাথে মানব উন্নয়নকে আবশ্যিকভাবে যুক্ত করা হয়। কারণ মানব উন্নয়ন ধারণা সৃষ্টিশীলতা ও বিকাশকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। ‘‘এজাজুল হক চৌধুরী, মানবিক উন্নয়ন, ঢাকা: জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশন, ১৯৯৯, পৃ. ১১’’। মানব উন্নয়ন ব্যাপক জনগণের পছন্দ ভিত্তিক একটি প্রক্রিয়া। এটি মানব সক্ষমতার উপর ভিত্তিশীল (জনগণের বিনিয়োগের মাধ্যমে) এবং এসব সক্ষমতা সমভাবে ব্যবহৃত হয় (আয় এবং কর্মপ্রবৃদ্ধির মাধ্যমে অংশগ্রহণমুখী পরিস্থিতির উন্নয়ন সাধন। ”ঐঁসধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ধং ধ ঢ়ৎড়পবংং ড়ভ বহষধৎমরহম ঢ়বড়ঢ়ষব’ং পযড়রপব. ওঃ ঢ়ষধপবফ বয়ঁধষ বসঢ়যধংরং ড়হ ঃযব ভড়ৎসধঃরড়হ ড়ভ যঁসধহ পধঢ়ধনরষরঃরবং (ঃযৎড়ঁময রহাবংঃরহম রহ ঢ়বড়ঢ়ষব) ধহফ ড়হ ঃযব ঁংব ড়ভ ঃযড়ংব পধঢ়ধনরষরঃরবং (ঃযৎড়ঁময পৎবধঃরহম ধ ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃড়ৎু ভড়ৎ রহপড়সব ধহফ বসঢ়ষড়ুসবহঃ মৎড়ঃিয.”–টঘঊঝ ঈউ ভড়ৎ অংরধ ধহফ ঃযব চধপরভরপ, টঘউচ, ঝড়পরড়-ঈঁষঃঁৎধষ ওসঢ়ধপঃ ড়ভ ঐঁসধহ জবংপড়ৎবং ওহঃবৎঢ়ৎবঃ, ১৯৯৪, ঢ়৮” মানব উন্নয়ন ধারণাটি বহুমাত্রিক ধারণার সমষ্টি। এর মধ্যে মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক, সর্বোপরি জীবনমান উন্নয়নকে বুঝায়।
১৯৯০ সলে ইউএনডিপি-র ‘টহরঃবফ ঘধঃরড়হং উবাবষড়ঢ়সবহঃ চৎড়মৎধসসব’ রিপোর্টে বলা হয়, মানব উন্নয়ন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা সমগ্র সম্পদের সম্প্রসারণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করে। ”ঐঁসধহ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ঢ়ৎড়পবংং ভধংপরহধঃরহম রং ঃযব বহঃরৎব ংঢ়বপঃৎঁস ঃযৎড়ঁময যিরপয যঁসধহ পধঢ়ধনরষরঃরবং ধৎব বীঢ়ধহফবফ ধহফ ঁঃরষরুবফ.”–টঘউচ জবঢ়ড়ৎঃ, ১৯৯০.” ১৯৯১ সালে মানব উন্নয়নের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নির্দিষ্ট হয়। এগুলো হলো মানুষের উন্নয়ন, মানুষের ধারা উন্নয়ন এবং মানুষের জন্য উন্নয়ন। মানুষের উন্নয়ন হলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সামাজিক কল্যাণে বিনিয়োগ করা। উন্নয়নের পূর্ণ অংশগ্রহণ ও প্রয়োগ হলো মানুষের দ্বারা উন্নয়ন আর মানুষের দ্বারা উন্নয়ন হলো প্রতিটি মানুষের চাহিদা, আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ”ধ) উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব যিরপব রহপষঁফবং রহাবংঃসবহঃ রহ বফঁপধঃরড়হ, যবধষঃয, হঁঃৎরঃরড়হ ধহফ ংড়পরধষ বিষষ নবরহম ধং ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব, ন) উবাবষড়ঢ়সবহঃ নু ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব যিরপয রসঢ়ষরবং ভঁষষ ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃড়ৎু ফবাবষড়ঢ়সবহঃ. প) উবাবষড়ঢ়সবহঃ ভড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব যিরপয ংঢ়বপরভরবং বাবৎুড়হব’ং হববফং ধহফ ঢ়ৎড়ারফবং রহপড়সব ধহফ বসঢ়ষড়ুসবহঃ ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃরবং ভড়ৎ ধষষ.–টঘউচ জবঢ়ড়ৎঃ, ১৯৯১.” ১৯৯২ সালে হিউম্যান ডেভেলাপমেন্ট ইনডেক্স বা মানব উন্নয়ন সূচক নির্ধারিত হয়। সংক্ষেপে একে বলে এইচডিআই, এগুলোর মধ্যে জীবনের দীর্ঘ স্থায়িত্ব, দক্ষতা উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞান, আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান বা সরকারি ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে আত্মকর্মসংস্থান অন্যতম। ”ঐঁসধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ওহফবী (ঐউও)–ধ) খড়হমবারঃু ড়ভ ষরভব (ন) কহড়ষিবফমব ৎবষধঃবফ ঃড় ফবাবষড়ঢ় ড়ভ ংশরশষষং ধহফ (প) ঝবষভ বসঢ়ষড়ুসবহঃ ড়ৎ ভড়ৎসধষ বসঢ়ষড়ুসবহঃ রহ ধ ঢ়ঁনষরপ ড়ৎ ঢ়ৎরাধঃব বহঃবৎঢ়ৎরংব.–টঘউচ জবঢ়ড়ৎঃ, ১৯৯২”
সাধারণ কথায়, মানবসম্পদ উন্নয়নকে বলা হয়, চবড়ঢ়ষব ঈবহঃৎব উবাবষড়ঢ়সবহঃ অর্থাৎ উন্নয়ন ব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ মানবকেন্দ্রিক; মানুষ নিজেরা নিজেদের দৈহিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ঘটাবে এবং নিজেরাই তার ফল ভোগ করবে। ‘‘ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, মানব সম্পদ উন্নয়ন, ঢাকা: তাসমিয়া পাবলিকেশন্স, ২০১০, পৃ. ১২৩’’ শিক্ষাবিদ-গবেষকগণের কেউ কেউ মানবসম্পদ উন্নয়নকে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট করে দেখেছেন যা কর্ম-কৃতিত্ব (ঔড়ন চবৎভড়ৎসধহপব) বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। তারা বলেছেন, মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো কর্ম-কৃতিত্ব উন্নয়ন বৃদ্ধির জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে সংগঠিত শিক্ষা অভিজ্ঞতা। ”ঐঁসধহ জবংড়ঁৎপব উবাবষড়ঢ়সবহঃ (ঐজউ) ধং ড়ৎমধহরুবফ ষবধৎহরহম বীঢ়বৎরবহপব রহ ধ ফবভরহরঃব ঃরসব ঢ়বৎরড়ফ ঃড় রহপৎবধংব ঃযব ঢ়ড়ংংরনরষরঃু ড়ভ রসঢ়ৎড়ারহম লড়ন ঢ়বৎভড়ৎসধহপব মৎড়ঃিয.”–খবড়হধৎফ ঘড়নষবৎ রহ জধভরয়ঁষ ওংষধস, ”ঐঁসধহ জবংড়ঁৎপব উবাবষড়ঢ়সবহঃ রহ জঁৎধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ রহ ইধহমষধফবংয, উযধশধ : ঘধঃরড়হধষ ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ খড়পধষ এড়াবৎসবহঃ ১৯৯০, ঢ়৭০”
মানবসম্পদ উন্নয়নে ইসলামের পদক্ষেপসমূহ : ইসলামে মানব উন্নয়ন আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক উন্নয়নের মূল বিষয়। ”ঐঁসধহ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ৎবসধরহং ঃযব শবু রংংঁব ড়ভ ংড়পরড়-বপড়হড়সরপ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ”–গড়যধসসধফ ঝড়ষধরসধহ ঞধহফধষ, ঝড়পরড়-ঊপড়হড়সরপ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ধহফ ঐঁসধহ ডবষভধৎব, উবাবষড়ঢ়সবহঃ ্ ঐঁসধহ ডবষভধৎব, জধলংযধযর, ২০০০, ঢ়২.” কুরআন মাজীদের মৌলিক বিষয় হলো মুসলিমের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত সমৃদ্ধি ও কল্যাণের জন্য মানব উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ গঠন। এ উন্নয়নের জন্য ইসলাম মানুষের দৈহিক আকৃতিতে মানুষ হওয়ার সাথে সাথে মানবিক ঔদার্য ও মানসিক সৌন্দর্যের অধিকারী হওয়ার উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। ইসলাম ঘোষণা করেছে, আল্লাহ তা’য়ালার সৃষ্টি হিসেবে মানুষ সম্মানিত এবং শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তা’লাই মানুষকে এ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তিনি সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি বানিয়েছেন’। ‘‘আল-কুরআন, ০৬ : ১৬৫,
তিনি অন্যত্র বলেছেন: নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দিয়েছি, তাদেরকে স্থলভাগে ও সাগরে চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে পবিত্র জীবিকা দিয়েছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। ‘‘আল-কুরআন, ১৭ : ৭০’’। তবে মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্বকে আল্লাহ তা’য়ালা স্থায়ী ও অক্ষয় করে দেননি। বরং মানুষের আচরণিক ও আত্মিক উন্নয়ন করা ও না করার উপর এর ভিত্তি স্থাপন করেছেন। কেউ যদি আল্লাহ তা’য়ালার নির্দেশনা মেনে নিজের আচরণ ও মানসিকতা উন্নত করে তাহলে সে তার শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণœ রাখতে পারবে। আর যদি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় তাহলে নীচ থেকে নীচতর স্তরে নেমে যাবে। ‘‘আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে বলেছেন: নিশ্চয় আমি মানুষকে সুন্দরতম করে সৃষ্টি করেছি। এরপর আমি তাকে সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে দিয়েছি’’। ‘আল-কুরআন, ৯৫ : ৪-৫’। মানুষের মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণœ রাখার পথ হিসেবে আচরণিক ও আত্মিক উন্নয়ন অনিবার্য করে ইসলামে মানবসম্পদ উন্নয়ন চেষ্টা নৈতিকভাবে সকলের জন্য বিধিবদ্ধ উপায়ে আবশ্যিক করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আবশ্যিক হয়েছে জ্ঞান অর্জন, হালাল জীবিকা উপার্জন ও গ্রহণ, স্বনির্ভরতা অর্জন, কর্তব্য পালন, যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ, আখিরাতে সফলতা- ব্যর্থতাকে মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ এবং বিশেষভাবে নৈতিক উন্নয়ন।
জ্ঞান অর্জন : মুমিন হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জনকে ইসলাম প্রথম শর্ত হিসেবে গণ্য করেছে। আল্লাহ তাআলা প্রথম মানুষ আদম আ. কে সৃষ্টির পর সবার আগে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন এবং এ জ্ঞানের পরীক্ষাতেই আদম আ. এর মাধ্যমে ফেরেশতাদের উপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। কুরআন মজীদে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আল্লাহ আদমকে প্রতিটি বিষয়ের নাম শেখালেন। এরপর তা ফেরেশতাদের সামনে পেশ করলেন এবং বললেন, ‘যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক, তাহলে আমাদের এগুলোর নামসমূহ জানাও।’ ফেরেশতাগণ বললেন, আপনি মহাপবিত্র। আপনি আমাদের যা শেখান, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী, মহা প্রজ্ঞাময়।’ আল্লাহ বললেন,‘হে আদম! তুমি তাদেরকে বিষয়গুলোর নাম জানিয়ে দাও।’এরপর যখন আদম তাদেরকে বিষয়গুলোর নাম জানিয়ে দিলেন, আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় আমি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অদৃশ্য সম্পর্কে জানি? আর আমি খুব ভালভাবেই জানি যা তোমরা প্রকাশ কর এবং যা গোপন রাখ। যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলীস ছাড়া সকলেই সিজদা করল। ইবলীস অবাধ্য হল ও অহঙ্কার করল এবং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। ’আল-কুরআন, ০২ : ৩১-৩৪’
রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন রিসালাত লাভ করলেন তখন তাঁর উপর প্রথম যে ওহী নাযিল হল তাও জ্ঞানার্জন বিষয়ক। হিরাগুহায় ধ্যানমগ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম ওহী লাভ করলেন, পড়–ন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন; যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত হতে। পড়–ন এবং আপনার প্রতিপালক মহাসম্মানিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন তা, যা সে জানত না। ‘ আল-কুরআন, ৯৬ : ১-৫’। জ্ঞানকে মর্যাদা ও কল্যাণের বাহন বর্ণনা করে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।” ‘আল-কুরআন, ৫৮ : ১১’। অন্যত্র বলা হয়েছে, তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমাত দান করেন। আর যাকে হিকমাত দেয়া হয় তাকে বিপুল কল্যাণ দান করা হয়। আর জ্ঞানীরা ছাড়া কেউ তো উপদেশ গ্রহণ করে না। ‘ আল-কুরআন, ০২ : ২৬৯’। আল্লাহ তাআলা সাধারণভাবে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণারও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অতএব হে চক্ষুষ্মান মানুষেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। ‘আল-কুরআন, ৫৯ : ২’।
জ্ঞানের প্রতি আল্লাহ তাআলার এমন গুরুত্বারোপের পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ (সা.) জ্ঞান অর্জনকে ফরয ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রতিজন মুসলিমের উপর ফরজ। ‘‘ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান, তাহকীক : মুহাম্মাদ ফুয়াদ আব্দুল বাকী, অধ্যায়: ইফতিতাহুল কিতাব ফিল ঈমান ওয়া ফাযায়িলুস সাহাবাহ ওয়াল ইলম, অনুচ্ছেদ : ফাযলুল উলামা-ই ওয়াল হাছছি আলা তলাবিল ইলম, বৈরূত : দারুল ফিকর, তা-বি, হাদীস নং-২২৪; হাদীসটির উল্লিখিত অংশটুকু সনদ সহীহ; মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী, সহীহ ওয়া যঈফ সুনানু ইবনু মাযাহ, হাদীস নংÑ ২২৪’’।
জ্ঞানীকে তিনি নবী-রাসূলগণের উত্তরসূরী আখ্যায়িত করে বলেছেন, আলিমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে দীনার বা দিরহাম রেখে যাননি। তারা উত্তরাধিকার রেখে গেছেন শুধু জ্ঞান। তাই যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করেছে সে অর্জন করেছে উত্তরাধিকারের পুরো অংশ। ‘‘ ইমাম আত-তিরমিযী, আস-সুনান, তাহকীক : আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির ও অন্যান্য,অধ্যায় : আল- ইলম, অনুচ্ছেদ : মা জাআ ফী ফাযলিল ফিকহি আলাল ইবাদাহ, বৈরূত :দারু ইহইয়াই তুরাছিল আরাবী, তা.বি, হাদীস নং- ২৬৮২; হাদীসটির সনদ সহীহ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী, সহীহ ওয়া যঈফ সুনানুত তিরমিযী, হাদীস নং- ২৬৮২’’। জ্ঞানার্জনের কাজকে তিনি আল্লাহর পথে জিহাদের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণে বের হয়েছে, সে আল্লাহর পথে রয়েছে, যতক্ষণ না সে প্রত্যাবর্তন করে। ‘‘ইমাম আত-তিরমিযী, আস-সুনান, অধ্যায় : আল-ইলম, অনুচ্ছেদ : ফাযলু তলাবিল ইলম, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ২৬৪৭; হাদীসটির সনদ যঈফ; মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল- আলবানী, সহীহ ওয়া যঈফ সুনানুত তিরমিযী, হাদীস নং- ২৬৪৭’’। এভাবে ইসলাম জ্ঞানার্জন ও গবেষণার কাজকে বাধ্যতামূলক রেখে মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে এমন বিধান রাখা হয় যে, একজন মানুষ মুসলিম হলে তাকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হয়। শিক্ষিত হওয়া ছাড়া মুসলিম হওয়ার বিষয়টি বিধিগতভাবে অসম্ভব বলে গণ্য হয়।
জীবিকা অর্জন : আল্লাহ তাআলার ইবাদত যেমন ফরয, ইসলামে জীবিকা উপার্জনকে তেমন ফরয করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এরপর যখন সালাত আদায় শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে, আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করবে এবং আল্লাহর বেশি বেশি যিকর করবে, এতে তোমরা সফল হবে। ‘আল-কুরআন, ৬২ : ১০’। আবার জীবিকা উপার্জনের ক্ষেত্রেও হালা-হারামের সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এমন প্রবলভাবে যে, ইবাদত কবুল হবে কি না, ব্যক্তি জান্নাতে যাবে কি না তা একান্তভাবে জীবিকা উপার্জনের পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল রাখা হয়েছে। ফলে ইসলামে একজন ব্যক্তি কেবল জীবিকাই উপার্জন করে না বরং হালাল উপায় অবলম্বন করে বৈধভাবে জীবিকা উপার্জন করে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হালাল উপার্জন অন্বেষণ করা ফরযের পরে ফরজ। ‘‘ইমাম আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ : ফী হুকুকিল আওলাদি….., বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১০ হি., হাদীস নং- ৮৭৪১; হাদীসটির সনদ মুনকার এবং যঈফ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছিয যঈফাহ ওয়াল মাওযূআহ ওয়া আছারুহাস সায়্যি ফিল উম্মাহ, রিয়াদ : দারুল মা’আরিফ, ১৪১২হি./ ১৯৯২ খ্রি. খ. ১৪, পৃ. ৩৪৮; হাদীস নং- ৬৬৪৫, ৩৮২৬’’। অর্থাৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু আহার করো, যা আমি তোমাদের জীবিকারূপে দিয়েছি এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করো আল্লাহর, যদি তোমরা একান্তই তাঁর ইবাদাত করো। ‘ আল-কুরআন, ০২ : ১৭২’। আল্লাহর রাসূল (সা.) এ প্রেক্ষাপটেই বলেছেন, হারাম সম্পদে তৈরি গোশত ও রক্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং হারাম সম্পদে তৈরি প্রতি টুকরো গোশত ও প্রতি ফোটা রক্তের জন্যে নরকই যথোপযুক্ত আবাস। ‘‘ ইমাম আল-বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, অনুচ্ছেদ : ফী তীবিল মাত’আমি ওয়াল মালবাস ওয়া ইজতিনাবিল হারামি ওয়া ইত্তিকা-ইশ শুবহাত, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ৫৭৬২; হাদীসটির সনদ সহীহ লি-গাইরিহী মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা’আরিফ, ৫ম সংস্করণ, খ. ২, পৃ. ১৫০; হাদীস নং- ১৭২৯’’।
স্বনির্ভরতা অর্জন : ইসলামে কেউ কারো গলগ্রহ হয়ে থাকাকে সমর্থন করা হয়নি। ব্যক্তি নিজে উপার্জন করবে, নিজের আয়ের উপর নির্ভর করবে। অন্য কারো আয়ে ভাগ বসাবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) সুষ্পষ্টভাবে বলেছেন, পবিত্রতম উপার্জন হলো মানুষের নিজের হাতের পরিশ্রম এবং প্রত্যেক বিশুদ্ধ ব্যবসায় (এর উপার্জন)। ‘‘আলাউদ্দিন আল-মুত্তাকী, আল-হিন্দী, কানযুল উম্মাল, অধ্যায় : আল-বুয়ূ, অনুচ্ছেদ: ফী ফাযায়িলিল কাসবিল হালাল, বৈরূত: মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৯৮৯খ্রি., হাদীস নং-৯১৯৬; হাদীসটির সনদ সহীহ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী, আস-সিলসিলাতুল আহদাসিস সহীহাহ, রিয়াদ : মাকতাবাতুল মা’আরিফ, খ. ২, পৃ. ১৫৯; হাদীস নং- ৬০৭’’। স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য কাজ করতে হলে কেউ যেন তাতে দ্বিধা না করে, লজ্জিতবোধ না করে তা নিশ্চিত করার জন্য ইসলামের শ্রম ও শ্রমিককে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। নানাভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা শ্রম পছন্দ করেন। শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে তিনি বলেছেন, যারা তোমাদের কাজ করে জীবিকা উপার্জন করে, সে শ্রমিক তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তাই যাদের কাছে এমন লোক আছে তাদেরকে যেন তা-ই খেতে দেয় যা তারা নিজেরা খায়, তাদেরকে যেন তা-ই পরতে দেয়, যা তারা নিজেরা পরে। তোমরা তাদেরকে তাদের সামর্থ্যরে বাইরে কোনো কাজ করতে বাধ্য করবে না। যদি তাদেরকে তোমরা কোনো কঠিন কাজ করতে দাও, তা হলে তোমরা তাদের সহযোগিতা করবে। ‘‘ইমাম আল-বুখারী,আস সহীহ, অধ্যায় : আল-ঈমান, অনুচ্ছেদ : আল-মাআসী মিন আমরিল জাহিলিয়্যাহ ওয়ালা ইউকফারু সহিবুহা বি-ইরতিকাবিহা বিশ-শিরক, বৈরূত: দারু ইবনি কাছীর, ৩য় সংস্করণ, ১৪০৭হি./১৯৮৭খ্রি. হাদীস নং-৩০’’।
শ্রমিককে যেন তার প্রাপ্য মজুরির জন্য নিয়োগকর্তার পেছনে ঘুরতে না হয় এবং শ্রমের ন্যায্য মূল্য নিয়ে নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকের মধ্যে যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য আল্লাহর রাসূল সা. নির্দেশ দিয়েছেন, শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক পরিশোধ করে দাও। ‘‘ইমাম ইবনু মাযাহ, আস-সুনান,অধ্যায়: আর-রূহুন, অনুচ্ছেদ : আজরিল উজারা, প্রাগুক্ত, হাদীস নং-২৪৪৩। হাদীসটির সনদ সহীহ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী, সহীহ ওয়া যঈফ সুনানু ইবনি মাজাহ্, হাদীসনং- ২৪৪৩’’। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রাফি’ ইবনু খাদীজ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে একদা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কোন প্রকারের উপার্জন উত্তম ও পবিত্রতম? তিনি বলেছেন, ব্যক্তির নিজের শ্রমের উপার্জন ও সৎ ব্যবসায়লব্ধ মুনাফা। ‘‘ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ, তাহীক : শুঅন্ব আল-আরনাউত, বৈরূত : মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪২০হি./১৯৯৯খ্রি. খ. ২৮, হাদীস নং-১৭২৬৫’’। হাদীসটির সনদ সহীহ গাইরিহী; মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ১৬৮৮।        (চলবে)