কাজিরবাজার ডেস্ক :
এতিমদের ২৪ বছর পর্যন্ত আবাসন সুবিধাসহ তাদের কারিগরি শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বলেছেন, বর্তমানে ছোটমনি নিবাসে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুদের রাখা হয়। এখন থেকে যেন ২৪ বছর পর্যন্ত এখানে থাকা যায় তার ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় ১১টি প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়। একনেক সভা শেষে প্রকল্পগুলো নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১১ টি (নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬ হাজার ৪৪৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন করা হবে ৬ হাজার ৪৪৪ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রকল্পের ব্যয় হবে ২৯৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর পুরোটাই সরকারি তহবিল। এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ১৯টি শিশু নিবাস করা হবে। বর্তমানে দেশে ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারে এতিম ও দুঃস্ত শিশুদের লালন পালন করা হচ্ছে। আর ৬টি ছোটমনি নিবাসে অভিবাবকহীন এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের লালন পালন করা হচ্ছে।’
‘এখন আর আমরা এতিমখানা বলি না। আমরা এর নাম দিয়েছি ছোটমনি নিবাস। এখানে ১৮ বছর পর্যন্ত তাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা, তাদের জীবনমান উন্নয়ন করা, শিক্ষা ও প্রযোজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং তারা যেন প্রশিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে সে ব্যবস্থা করা।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে নির্দেশনা দিয়েছেন ছোটমনি নিবাসে যেন ২৪ বছর পর্যন্ত তাদের রাখা হয়। এতে তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের ভালোভাবে বিভিন্ন আইটি প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে। তাদের যথাযথ কারিগরি শিক্ষা দেয়া যাবে।’
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি বেসিক সেন্টারে ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১টি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প সম্পর্কে পকিল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এ প্রকল্পে ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে এর পুরোটাই জিওবি।’
‘আজকের প্রকল্পের আওতায় দেশে মধ্যম পর্যায়ের দক্ষ বস্ত্র প্রযুক্তিবিদ তৈরি এবং তাঁতিদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ি ডিজাইন উদ্ভাবন, সর্বোপরি তাঁতিদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, একনেক বৈঠকে দেশের যেসব স্থানে তাঁত শিল্প রয়েছে সেগুলোর জন্য প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সিলেটের মনিপুরি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাঁত শিল্প বিকাশে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে।
একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের নিমিত্তে ভূমি অধিগ্রহণ প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে তিন হাজার ১৯৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা, ডেসকো এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সরবরাহ ও স্থাপন প্রকল্পে ১৮৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বাংলাদেশে তাঁত বোর্ডের আওতায় ৫টি বেসিক সেন্টার ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও একটি ফ্যাশন ডিজাইন ইনস্টিটিউট এবং ২টি মার্কেট প্রমোশন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে ১১৭ কোটি টাকা, ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পীরগঞ্জ, রংপুর স্থাপন প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, সরকারি শিশু পরিবার এবং ছোটমনি নিবাস নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ প্রকল্প।
এছাড়া সিলেটে হাই-টেক পার্কের প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ২৯৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলাধীন পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পে ২৯২ কোটি ২৩ লাখ টাকা, সোনাপুর হতে চেয়ারম্যানঘাট সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ১৬৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, বীরগঞ্জ-খানসামা-দাড়োয়ানী, খানসামা-রাণীবন্দর এবং চিরিরবন্দর-আমতলী বাজার জেলা মহাসড়কে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে ১৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা, কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে পিসি গার্ডার নির্মাণ ও ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদি ড্রেজিং ও বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে একহাজার ৪৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।