বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখুন

20

গত বছর পেঁয়াজের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সরকারকে বেশ ভুগিয়েছে। তার জের এখনো রয়ে গেছে বাজারে। স্বাভাবিক হয়নি পেঁয়াজের দাম। পাইকারি দোকানে প্রতি কেজি দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে কমপক্ষে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৮০ টাকার নিচে ছিল, এখন তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। বাড়তি বিদেশি পেঁয়াজের দামও। শীতের সবজি বাজারে এলেও দাম বেশি। এরই মধ্যে একবার লবণের দাম বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। সব মিলিয়ে বাজার যখন অনেকটাই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, তখনই নতুন করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে—এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম এখনো বেশি। টিসিবির হিসাবে এখন ১৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেশি। কম সাতটির দাম। পেঁয়াজের সঙ্গে বেড়েছে ভোজ্য তেল ও চিনির দাম। গত সপ্তাহে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে আট টাকা বাড়িয়েছে। সঙ্গে প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়ানো হয় কেজিপ্রতি সাত টাকা। বাজেটের পর এখন পর্যন্ত খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১২ টাকার মতো। গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজ, আলু, চিনি, ভোজ্য তেল, ডিম, এলাচি ও ময়দার দাম কমবেশি বেড়েছে। কমার তালিকায় একটিও নেই।
বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করতে চান। তাঁরা বলছেন, দুই মাস ধরে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম অস্থিতিশীল। বাজার অনেক বেড়ে গেছে। অনেক সতর্ক আমদানিকারক আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। চিনির দাম বাড়ার ক্ষেত্রেও একই কারণ দেখাচ্ছেন আমদানিকারকরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল বলছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কথা বলে কোম্পানিগুলো অযৌক্তিক দাম বাড়াচ্ছে কি না তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, সয়াবিন, পাম তেল ও চিনির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলা হলেও একটি বিষয় দেখা যায়, তা হচ্ছে বাংলাদেশে বিশ্ববাজারের তুলনায় দাম অনেক বেশি থাকে। আর সে কারণেই বাজারে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা এড়াতে সঠিক চিত্রের ধারণা নিয়ে আগাম সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বিশ্ববাজারে যখন দাম বাড়ছে, তখন সরকারকে আগাম সতর্ক অবস্থান নিতে হবে। চাহিদা ও জোগান নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশ কিভাবে সামাল দেয়, সে ধারণাও সামনে রাখতে হবে। পর্যাপ্ত মজুদের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে পেঁয়াজের মতো আরেকটি পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। রোজা আসছে। রোজার সময় কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা প্রতিবছরই লক্ষ করা যায়। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।