বড় বড় শহরের বস্তিগুলোকে বলা হয় নগরীর ক্যান্সার। আলো-বাতাসহীন অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বস্তিগুলোতে বসবাস করে লাখ লাখ মানুষ। বস্তিতে জন্ম নেয়া শিশুরা ভোগে অপুষ্টিতে, পায় না যথাযথ শিক্ষা। অনেকটা অভিভাবকহীন এই শিশুরা বেড়ে ওঠে রাস্তা-ফুটপাথে ‘টোকাই’ নাম নিয়ে। বড় হয়ে এদের অনেকে হয়ে ওঠে অপরাধী। শুধু তাই নয়, নগরীর অনেক বস্তিই চিহ্নিত হয়েছে অপরাধের কেন্দ্র হিসেবে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যা বস্তিগুলোতে সংঘটিত হয় না।
অনেক নারী পুরুষ জড়িয়ে পড়ে অপরাধমূলত কার্মকা-ে। মাদক ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধে জড়িয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
এমন পরিবেশ থেকে দরিদ্র মানুষগুলোকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালে প্রথম গ্রহণ করেন ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচী। ‘৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু পরিবারকে তিনি মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়ে গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এই কর্মসূচী বন্ধ করে দেয়। ২০১০ সালে দ্বিতীয় দফা আবারও শুরু হয় ঘরে ফেরা কর্মসূচী। এই সময় আরও কিছু পরিবার ফিরে যায় গ্রামে। পরে আশ্রয়ণসহ আরও কিছু কর্মসূচী চালু করে দরিদ্র মানুষের গৃহসংস্থানের উদ্যোগ নেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এর পাশাপাশি তিনি আবারও ঘরে ফেরা কর্মসূচী চালুর ঘোষণা দিয়েছেন।
সম্প্রতি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ফ্ল্যাট এবং বস্তিবাসীদের জন্য নির্মিত স্বল্প ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসীদের নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলাম। যদি কারও ভিটেমাটি থাকে সেখানে বিনা পয়সায় ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়া, তাকে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার পাশাপাশি সে যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য। তখন প্রায় ১৮ হাজার পরিবার নিজ গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। এখনও যারা নিজের গ্রামে ফিরতে চান, যদি কারও জমি নাও থাকে জমিসহ আমরা ঘর দেব। সেই সঙ্গে ঋণ পাবেন এবং সেখানে কাজ করার সুযোগ পাবেন। প্রয়োজনে ছয় মাসের খাবার আমরা বিনামূল্যে দেব, যাতে ওই ছয় মাসের মধ্যে নিজে একটা কাজ খুঁজে নিতে পারেন। সেই ঘরে ফেরা কর্মসূচীটা আবার আমি ভালভাবে চালু করব। নানাভাবেই বস্তিতে একটা অস্বাভাবিক এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে। বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে না থেকে নিজের গ্রামে ফিরে গেলে এই সুবিধাগুলো পাবেন’।
দরিদ্র অসহায় গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় দিয়ে একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ’৯৬ সাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য দফায় দফায় চালু করা হয়েছে ঘরে ফেরা কর্মসূচী, আশ্রয়ণ ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মতো অনেক গণমুখী কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগে বস্তির অপরিচ্ছন্ন জীবন থেকে দরিদ্র মানুষগুলো একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর জীবন পাবে, গড়ে উঠবে বস্তিহীন একটি সুন্দর বাংলাদেশ, এই প্রত্যাশা সকলের।