আগে পাওনা আদায় পরে আলোচনা হতে পারে ॥ গ্রামীণফোনের উকিল নোটিশের জবাব দিয়েছে মন্ত্রণালয়

29

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গ্রামীণফোনের পাঠানো উকিল নোটিসের জবাব দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। জবাবে বলা হয়েছে, সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশ মানার পরই গ্রামীণফোনের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। তার আগে গ্রামীণফোনের সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না। সরকারের পাওনা আদায় করা হবে আগে। গ্রামীণফোন ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা না করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসার সুযোগ চেয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। গ্রামীণফোন ৯০ দিনের মধ্যে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় বাস্তবায়ন করলে মন্ত্রণালয় কোর্টের নির্দেশে গ্রামীণফোনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করবে। উকিল নোটিস পাঠিয়ে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তা দুঃখজনক। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোন রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিস পাঠানোয় ‘ভুল’ স্বীকার করে ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা আলোচনার সুযোগ চায়। কিন্তু আমরা উকিল নোটিসের জবাব দিয়েছি। গ্রামীণফোন সিঙ্গাপুরের যে ‘ল ফার্মের’ মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিস দিয়েছে আর্বিট্রেশনে যাওয়ার জন্য। ওই ফার্ম নোটিসের জবাব পেয়েও গেছে। উকিল নোটিস পাঠিয়ে গ্রামীণফোন যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তা মেনে নেয়া যায় না। যদি নোটিস দিতেই হয় তাহলে টেলিনর যে দেশের কোম্পানি সেই দেশ দেবে। সিঙ্গাপুর এখানে কোন পার্টি হতে পারে না। তাছাড়া গ্রামীণফোন যে দেশে ব্যবসা করছে সেই দেশের আইন-কানুন মেনেই ব্যবসা করতে হবে। ব্যবসা যদি কেউ করে, তাহলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা থাকবে, আমাদের দায়িত্ব ফেসিলিটেট করা, আমরা তাদের করব বা করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে ব্যবসা করবে একটি প্রতিষ্ঠান, সেই প্রতিষ্ঠান দেশের আইন না মেনে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিস দিয়ে আর্বিট্রেশনের জন্য চাপ দেবে। এটা মেনে নেয়া যায় না।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পাওনা চেয়ে গত এপ্রিল মাসে চিঠি দিয়েছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এই চিঠির পর গ্রামীণফোন কোন সাড়া না দেয়ায় বিটিআরসি গ্রামীণফোনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। গ্রামীণফোনের পাশাপাশি মোবাইল অপারেটর রবির কাছেও ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা আদায়ের জন্য বিটিআরসি চিঠি দেয়। রবিও বিটিআরসির চিঠির কোন গুরুত্ব দেয়নি। বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় গ্রামীণফোন ও রবি অপারেটর আদালতে মামলা করে। মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে অর্থমন্ত্রী গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দফা বৈঠক করলেও কোন সমাধান হয়নি। বিটিআরসির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার নিরীক্ষা দাবির নোটিসের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে গত ২৪ নবেম্বর গ্রামীণফোনকে অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয় সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। রবির নিরীক্ষা আপত্তির বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের রায়ের ৯০ দিন পার হয়ে গেলে আমরা গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এর আগে আইনের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাংলাদেশের আদালতে মামলা করে হেরে গেছে। আদালতের বাইরে আর্বিট্রেশন করার কোন সুযোগ নেই আমাদের। আদালত যদি হুকুম দেয় আর্বিট্রেশন করার, তাহলে করতে পারব। যে দেশে ব্যবসা করে সে দেশের আইন আদালত অমান্য করে দুনিয়ার অন্য কোন জায়গায় গিয়ে বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই জেনেই রবিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। রবিকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি টাকা দিয়ে দিলে আমাদের কোন কথা নেই।
মন্ত্রী আরও বলেন, উকিল নোটিসে গ্রামীণফোন আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার যে কথা বলেছিল সেখান থেকে সরে গেছে। ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে তারা কোন আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে না। তবে বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসার সুযোগ চেয়েছে। আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি ৯০ দিনের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করার পরই তাদের সঙ্গে বসা যেতে পারে। এর আগে গ্রামীণফোনের সঙ্গে কোন ধরনের কথা নেই। দেশের আদালত, নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে উকিল নোটিস পাঠানোর মতো ধৃষ্টতা দেখানো দুঃখজনক।