কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দেয়া ইশতেহার বাস্তবায়নের সঙ্গে স্মার্ট ও শক্তিশালী আওয়ামী লীগ গঠন করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন আওয়ামী লীগের পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে অনেক কাজ বাকি। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। সেগুলো মোকাবেলায় এক হয়ে কাজ করতে হবে। আমাকে টানা দ্বিতীয়বার দায়িত্ব দিলেও শেখ হাসিনা এ নিয়ে নবমবারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা অপরিহার্য।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর শনিবার রাজধানীর ধানম-িস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। তাকে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করায় কাউন্সিলর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।
গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আমাদের প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভাবি না, আমরা আমাদের দেশের গণতন্ত্রকে এক চাকার বাইসাইকেল মনে করি না, আমরা মনে করি দুই চাকার বাইসাইকেল। গণতন্ত্রকে আমরা শক্তিশালী করতে চাই। সেজন্য বিরোধী দলের প্রতি আমাদের টলারেন্স আছে। আমরা কখনও তাদের কোন সভা-সমাবেশে প্রতিরোধ করি না। আমাদের পার্টি অফিসের সামনে আমাদের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত করেছিল, সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়। তারপরেও আমরা পাল্টা আঘাত করিনি। আমরা সহিষ্ণুতা দেখিয়েছি। বিরোধী দলের প্রতি আমাদের সহিষ্ণুতা থাকবে। তবে যেখানে সহিংসতা তা মোকাবেলা করা হবে, জনগণের জানমালের রক্ষার স্বার্থে করতে হবে।
কাউন্সিল অধিবেশন পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণের কাছে তিনি অঙ্গীকার করেছেন, প্রত্যেক গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়া এবং প্রত্যেক পরিবারে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা পূরণ করব। এগুলো আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ। এর জন্য বিরাট দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। আমরা স্ট্রং টিম লাইন স্পিরিটেট টিম ওয়ার্ক গড়ে তুলব। স্মার্ট ও আধুনিক আওয়ামী লীগ গড়ে তুলব। ট্র্রেডিশনের সঙ্গে টেকনোলজি, আইডিয়োলজির সঙ্গে রিয়ালিজম, এর মধ্যে একটা সুন্দর ব্যালেন্স তৈরি করব।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সঙ্কট উত্তরণের দিক-নির্দেশনা নেই- বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওবাযদুল কাদের বলেন, এটা তারা বলবে, কারণ তাদের নিজেদের দলেই ন্যূনতম গণতন্ত্র নেই। মির্জা ফখরুল সাহেব তো আমার এক বছর আগে মহাসচিব হয়েছেন। এখন এটা কত বছরের কমিটি এটা কেউ জানে না, কবে হবে তাদের জাতীয় সম্মেলন? কোন জেলার সম্মেলন হয়েছে, এটা আমরা গত দশ বছরেও দেখিনি। তারা কমিটি করেছে সেটাও জাম্বু জেট। বিএনপি তো নিজেদের দলেই তো গণতন্ত্র নেই, তারা গণতন্ত্রের তাৎপর্য কি বুঝবে? ঘরে যাদের গণতন্ত্র নেই তারা দেশে কীভাবে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে?
আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে পুনর্র্নিবাচিত এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। কাউন্সিলেও সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাবের পর নির্বাচন কমিশন তিন তিন বার কাউন্সিলরদের বলেছেন, আর কোন নাম প্রস্তাব আছে কি না। প্রস্তাব না থাকায় কমিশন আমাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর কাউন্সিলররাই তাকে বাকি কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছেন। পরে সভাপতিমন্ডলীর সদস্যসহ কমিটির বেশিরভাগ সদস্যের নাম ঘোষণা করেছেন সভাপতি। এখনও কিছু কিছু পদ খালি আছে। আমরা আশা করছি, দু’এক দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কাজ শেষ করে আমরা সবাইকে নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করব। তিনি বলেন, অনেকে ছিল যাদের নেত্রী ভারবাহী করতে চাননি, যাদের মন্ত্রিত্ব আছে, তেমন অনেকেই হয়ত দায়িত্বের পরিবর্তন এবার হবে। সদস্য পদে নতুন মুখ আসবে কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, সদস্যদের মধ্যে কিছু নতুন মুখ আসবে। দু’একদিনের মধ্যে সভাপতিমন্ডলীর সঙ্গে আলাপ করে ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, মার্চের দশ তারিখের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ বাকি জেলা, মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলন করে ফেলব।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নহার লাইলী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।