৩৮ বছর ধরে তিনি দলের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মী সমর্থক এমনকি ভোটারেরও প্রিয় নেত্রী একজনই। আর তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাই জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে কারও মনে কোন প্রশ্ন জাগে না কখনই। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ২১তম জাতীয় সম্মেলনে সকলের চাওয়া অনুসারেই নবম বারের মতো নৌকার হাল ধরলেন শেখ হাসিনা। আর এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হলেন ওবায়দুল কাদের। কয়েক নেতার নাম এ পদের জন্য কম বেশি আলোচনায় আসলেও ওবায়দুল কাদেরের ওপরই আস্থা রেখেছেন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা।
বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালনের রেকর্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগেই ছিল। গত ৩৮ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দলটির শীর্ষ পদে আছেন তিনি। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলের ত্রয়োদশ সম্মেলন থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ চার বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছে। বিশ্বের নারী নেত্রীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি দিন সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কাতারে শেখ হাসিনার অবস্থান মেয়াদের দিক দিয়ে তৃতীয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের নারী রাষ্ট্র নেতাদের মধ্যে এই ছয়জনই একযুগের বেশি সময় সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকে আধুনিক বিশ্বের প্রথম নারী সরকার প্রধান ছিলেন। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তিন দফায় ১৭ বছর ২০৮ দিন দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী। ঘাতকের হাতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত দুই দফায় মোট ১৬ বছর ১৫ দিন তিনি ভারত সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা তিন দফায় ১৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে আরও পাঁচ বছরের জন্য সরকারে আছেন। এই মেয়াদ পুরো হলে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবেন তিনি।
ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া ডোমিনিকা প্রজাতন্ত্রের ইউজিনিয়া চার্লস ক্ষমতায় ছিলেন ১৪ বছর ৩২৮ দিন। ২০০৫ সাল থেকে একটানা ১৪ বছর জার্মানির ক্ষমতায় আছেন চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল। ২০২১ সালে তার মেয়াদ শেষ হবে। আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে একটানা ১২ বছর ছয়দিন দায়িত্ব পালনের পর এলেন জনসন সারলিফ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়েন।
এদিকে শনিবার ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা নবম বারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ববাবরের মতো এবারের সম্মেলনেও সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত করা হন জাতির জনকের কন্যা। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল।
এরপর ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে চতুর্দশ, ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পঞ্চদশ, ১৯৯৭ সালের মে মাসে ষোড়শ, ২০০২ সালের ডিসেম্বরে সপ্তদশ, ২০০৯ সালের জুলাইয়ে অষ্টাদশ, ২০১২ সালের ডিসেম্বর ঊনবিংশ এবং ২০১৬ সালে বিংশতম সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন হাসিনা। শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান দুই বোন হাসিনা ও রেহানা। পরের ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লীতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে।
১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছরের মাথায় সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সময়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে বসেন বিরোধী দলীয় নেতার আসনে।
তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে মিলে একনায়ক এরশাদ সরকারের পতন ঘটায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে গিয়ে আবার বিরোধী দল হয়।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তার সেই সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির কথা বলা হয়।
২০০১ সালে বিতর্কিত এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে তৃতীয় বারের মতো বিরোধীদলীয় নেত্রী হন শেখ হাসিনা। ওই সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আরও অনেক রাজনীতিবিদের মতো শেখ হাসিনাও গ্রেফতার হন। দুই বছরের মাথায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয় বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
বিএনপি ও তাদের শরিকদের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের ভোট হয়, তাতে ২৩১ আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। সেই সরকারের মেয়াদ শেষে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলই অংশ নেয়। ভোটের ফলে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। আবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা।