আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বাজেটে দেশের সাড়ে তিন কোটি প্রান্তিক মানুষের সুরক্ষায় যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা অনেকের প্রশংসা অর্জন করেছে। অন্যদিকে উচ্চবিত্তদের বেশি ছাড় দেওয়া ও মধ্যবিত্তের ওপর অধিকতর চাপ সৃষ্টি হওয়ার মতো পদক্ষেপের কড়া সমালোচনাও হচ্ছে। বাজেট ঘোষণার পর এমন সমালোচনা নতুন নয়। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পরও এমনটা দেখা গিয়েছিল। অনেক কিছুতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর অনড় অবস্থান যথেষ্ট ক্ষোভেরও সঞ্চার করেছিল। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাজেটে বেশ কিছু কাটছাঁট করার পর তা জাতীয় সংসদের অনুমোদন পায়। আশা করা যায়, এবারও প্রধানমন্ত্রীর সময়োচিত হস্তক্ষেপে ঘোষিত বাজেটের সবচেয়ে সমালোচিত দিকগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের অনেকেই দাবি করছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ধনীদের স্বার্থ বেশি দেখা হয়েছে। সে তুলনায় অনেক বেশি উপেক্ষিত হয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বেশ কিছু বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে আছে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে চলে আসা করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা, যদিও এর মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বৃদ্ধ ও পেনশনভোগী মানুষের প্রধান অবলম্বন সঞ্চয়পত্রে উেস করের প্রস্তাব করা। ডিজিটাল দুনিয়ায় মানুষের জীবনের অত্যাবশ্যকীয় অংশ হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং স্মার্টফোন আমদানির ওপর শুল্কারোপ। সর্বোপরি যে বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে সেটি হলো সয়াবিন তেল ও গুঁড়া দুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে করারোপের প্রস্তাব। অর্থনীতিবিদরা এসব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যদিকে এবারের বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। ১৯৯৮ সাল থেকে চার লাখ প্রবীণ মানুষের জন্য মাসে ১০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা চালু করেছিল। এবারের বাজেটে এই ভাতাভোগীর সংখ্যা আরো চার লাখ বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতার পরিমাণ মাসে ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিত্তহীন পরিবারে প্রতিবন্ধী সন্তানরা খুবই উপেক্ষিত থাকে। এবারের বাজেটে প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির পরিমাণও। প্রান্তিক মানুষের চিকিৎসা পাওয়াটা ক্রমেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। আর দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগের চিকিৎসা পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব। এবারের বাজেটে ক্যান্সার ও লিভার সিরোসিসের মতো কিছু জটিল রোগে প্রান্তিক মানুষের জন্য বিশেষ সহায়তার প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষকের স্বার্থ রক্ষায়ও বাজেটে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে আছে কৃষিপণ্যের রপ্তানিতে বিশেষ প্রণোদনা, সেচ ও বিদ্যুতের বিলে ছাড়, কৃষি উপকরণে ভর্তুকি ইত্যাদি।
সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোসহ গৃহীত পদক্ষেপগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে। একই সঙ্গে আমরা চাই, করমুক্ত আয়সীমা, সঞ্চয়ের উেস করসহ মধ্যবিত্তের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এমন পদক্ষেপগুলোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হোক।