ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণা, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা না দেওয়া ও গ্রাহকের অজান্তে টাকা কেটে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে। এবার যে অভিযোগটি উত্থাপিত হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক।টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, সরকারের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে অপারেটরগুলো এমন কিছু করছে, যা রাষ্ট্র ও জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। অপারেটরদের কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নাম। তাঁদের ‘প্রিমিয়াম’ মোবাইল ফোন নম্বর অন্য গ্রাহককে দিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিটিআরসি এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাইলেও সংশ্লিষ্ট অপারেটররা শুধু যে গড়িমসি করেছে তা নয়, মিথ্যারও আশ্রয় নিয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, প্রতিমন্ত্রীর নম্বর ‘ডুয়াল ক্লেইম’ পদ্ধতিতে আরেক গ্রাহককে দিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বদলে ফেলা হয়েছে অপারেটর, যা সরকারি নির্দেশনার সরাসরি লঙ্ঘন। বিটিআরসি এ বিষয়ে যতবার সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, ততবারই ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত ও অধিকতর তদন্তের নামে যেভাবে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে, তা এক অর্থে প্রতারণারই শামিল। অভিযুক্ত মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের প্রতি ইস্যু করা থ্রিজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ-৪৯ এবং ফোরজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের অনুচ্ছেদ ৩৭-এর শর্তাবলি লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করছে বিটিআরসি।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ অনেক দিনের। ফোরজির কথা বলা হলেও ঘোষিত প্যাকেজে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া যায় না। প্রয়োজনের সময় গ্রাহক ফোরজি দূরে থাক টুজি গতির ইন্টারনেট সংযোগও পায় না, এমন অভিযোগ এখন পুরনো হয়েছে। একেবারেই সাধারণ সেবা কথা বলার সময় যে হারে কলড্রপ হয়, তা যেকোনো গ্রাহককে বিরক্ত করার জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া কোনো যুক্তি ছাড়াই বিরক্তিকর এসএমএস, বাণিজ্যিক নানা সংস্থার কাছে টেলিফোন নম্বর দিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সম্পর্কে গ্রাহকদের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক ধারণাও জন্ম নিচ্ছে। মোবাইল ফোন এখন নিত্যব্যবহার্য একটি পণ্যে পরিণত হওয়ায় তা ছেড়েও যাওয়া যাচ্ছে না। আর এ সুযোগটি নিচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অভিযুক্ত অপারেটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপারেটরদের এ ধরনের হয়রানি করা অনেকাংশে কমে যাবে বলে গ্রাহকদের বিশ্বাস। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা অভিযুক্ত সব অপারেটরের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।