প্রকৃতি ক্রমে অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বা গ্রীষ্মকালে যেখানে কাঠফাটা রোদ থাকার কথা, সেখানে প্রায় পুরোটা সময় আকাশ থেকেছে মেঘে ঢাকা। কখনো কখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টিও হয়েছে। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে স্বল্পস্থায়ী বন্যাও হয়েছে।
জানা যায়, প্রকৃতির এমন ধারা আচরণ দেখে আবহাওয়াবিদরাও অবাক হয়েছেন। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এবার বর্ষাও প্রবল হবে এবং দেশব্যাপী ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে। তেমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমরা কি প্রস্তুত?
বিজ্ঞানীরা অনেক দিন থেকেই বলে আসছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস অত্যধিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর হচ্ছে। তার ফলে জলবায়ুর প্রচলিত ধারা বদলে যাচ্ছে। মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমশ বাড়ছে। উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল ক্রমেই বেশি করে তলিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত বেড়ে যাচ্ছে। বন্যা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ ও তীব্রতা দুটিই বাড়ছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সেসব আলামতই বেশি করে দেখতে পাচ্ছি। গত দুই মাসে বজ্রপাতে শতাধিক মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে আরো বেশি। শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমি ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক বয়স্ক লোককেও বলতে শোনা গেছে, জীবনে কখনো এত বড় বড় শিল পড়তে দেখেননি। আবহাওয়া বিভাগের হিসাব মতে, গত এপ্রিলে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। আর মে মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৩ শতাংশ বেশি। ফলে বোরো ধান কাটতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কাটার পর সেসব ধান শুকাতেও পারছে না কৃষকরা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। বৃষ্টির দিনে কাজ কমে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছে নিম্ন আয়ের বহু মানুষ। সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে সবজির দাম বাড়তে বাড়তে তা এখন সাধারণ মানুষের নাগালের প্রায় বাইরে চলে গেছে। আসন্ন বর্ষায় এই অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে অনেকেই শঙ্কিত। বাংলাদেশে বন্যার আরেকটি বড় কারণ নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়া। উজানের পানি নেমে এলে প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো তা ধারণ করতে পারে না। তখন সৃষ্টি হয় সর্বনাশা বন্যার। বিশেষ করে যমুনা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল চরম ক্ষতির মুখোমুখি হয়।
বন্যা-জলাবদ্ধতার দৃশ্যমান ক্ষতি ছাড়াও আরো অনেক ধরনের ক্ষতি রয়েছে। পানিবাহিত রোগব্যাধি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। বেড়ে যায় মশাবাহিত রোগ। গবাদি পশু নিয়ে মানুষ সংকটে পড়ে। সড়ক যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। আর এসব কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিম্ন আয়ের লোকজন। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।