স্পোর্টস ডেস্ক :
ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় অর্ধশতাধিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। অল্পের জন্য রক্ষা পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা। তাই সফরের শেষ ম্যাচ- তৃতীয় টেস্ট না খেলেই দেশে ফিরে আসে বাংলাদেশ দল। এখন অনেকেই ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল) খেলছেন নিজেদের ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি ঠিকঠাক রাখার জন্য। ৩০ মে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে দীর্ঘ ধকল রয়েছে ক্রিকেটারদের। কারণ ১ মে দেশ ছাড়বেন ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার জন্য। সবমিলিয়ে প্রায় আড়াই মাসের ধাক্কা। এ কারণে ক্রিকেটাররা চাইলে প্রয়োজনে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর বিশ্রাম দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান। এছাড়া এবার ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়েও বিসিবি বেশ তৎপর। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছেন ইতোমধ্যেই আয়ারল্যান্ড থেকে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে এবং বিশ্বকাপের আগে কয়েকদিন বিরতিতে ইংল্যান্ডেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) কাছে বাড়তি নিরাপত্তার আবেদন করেছে বিসিবি।
ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ঠিকঠাকভাবে নেয়ার জন্য আগেই বিসিবির কাছে বিশ্রাম চেয়ে নিয়েছেন মুশফিকুর রহীম ও তামিম ইকবাল। তারা খেলছেন না প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ। তাছাড়া কাঁধের ইনজুরির কারণে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ইনজুরি কাটিয়ে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) যোগ দেয়ায় সাকিব আল হাসান খেলছেন না ডিপিএল। জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্যদের বাকিরা ঠিকই এই লীগে খেলছেন। আগামী ২২ এপ্রিল থেকে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তারপর থেকেই মূলত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে। ৫ মে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল, সেজন্য ১ মে দেশ ছাড়বে। ১৭ মে এই সিরিজটি শেষ হবে। এরপর বিশ্বকাপের ব্যস্ততা। তাই আর দেশে ফেরা হবে না ক্রিকেটারদের। এ জন্য দীর্ঘ এই ব্যস্ততার মধ্যেই জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার বিশ্রাম চাইছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমাবে বাংলাদেশ দল। এরপর ইংল্যান্ডের লিচেস্টারে পাঁচদিনের প্রস্তুতি ক্যাম্প করবে জাতীয় দল। দেড় মাস দীর্ঘ বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ক্যাম্পের সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চায় বাংলাদেশ দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। এ বিষয়ে আকরাম খান বলেন, ‘আমি শুনেছি ক্রিকেটাররা বিশ্রামের ব্যাপারে চিন্তা করছে। তবে আমরা এখনও কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি। আমরা বুঝতে পারছি, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফর অনেক লম্বা হবে। কারণ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ অনেক লম্বা সময় ধরে চলবে। যদি ক্রিকেটাররা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করে, আমরা অবশ্যই বিষয়টি দেখব। আয়ারল্যান্ড সিরিজ ও লিচেস্টারে ক্যাম্পের মধ্যে চারদিনের বিরতি থাকবে। আমি শুনেছি ক্রিকেটাররা এই সময়টা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাত চাইছে।’
প্রায় আড়াই মাস দেশের বাইরে থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তিপ্রিয় ও নিরাপদ দেশে যে ভয়ানক হত্যাযজ্ঞে আক্রান্ত হওয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সাকিব-মুশফিকরা সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে বিসিবি। আগেই জানানো হয়েছিল এখন থেকে যে কোন বিদেশ সফরে দলের নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি মনোযোগ দেয়া হবে। এবার সিইও নিজামউদ্দিন জানালেন আসন্ন আয়ারল্যান্ড সফরে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে বিসিবির ভাবনার কথা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পরের পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা-পরিকল্পনার ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি সচেতন বিসিবি। ২০১৭ সালের আয়ারল্যান্ড সফরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিসিবি সন্তুষ্ট থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারে বাড়তি কিছু আশা করছে বাংলাদেশ।’ ইতোমধ্যেই আয়ারল্যান্ডের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকল্পনা চেয়েছে বিসিবি। এছাড়া বিশ্বকাপের আগেও আইসিসির কাছে নিরাপত্তার ব্যাপারে সহযোগিতার আশা করছে বিসিবি। আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপের ওয়ার্মআপ ম্যাচগুলো শুরুর পর থেকেই অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিরাপত্তা দেবে আইসিসি। কিন্তু বাংলাদেশ দল আগে ভাগে যাওয়ার কারণে প্রায় ৬ দিন সেটা পাবে না। ওই সময়েও বাড়তি নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা চেয়েছে বিসিবি। এ বিষয়ে সিইও সুজন বলেন, ‘আমরা যেহেতু বিশ্বকাপ শুরুর ৫-৬ দিন আগে যাব। তাই আইসিসির কাছে এই কয়েকদিন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। তারা সমন্বয় করে দেবে, আমরা সমুদয় খরচ বহন করব। পরে বিশ্বকাপের সময় তো আইসিসিই এ বিষয়গুলো দেখবে। বিশ্বকাপের সময় আইসিসির নিরাপত্তা গ্রুপ সব দলের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিবে। তারা নিয়মিত আমাদের খোঁজ-খবর জানাচ্ছে, সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাচ্ছে নিরাপত্তার ব্যাপারে।’