অকালপ্রয়াত সিলেটের যুবসংগঠক এডভোকেট মইনুদ্দিন আহমদ জালালকে বিশ্বব্যাপী নদী অধিকার আদায়ের একজন আজীবন সংগ্রামী বলে অভিহিত করেছেন নদী অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অঙ্গীকার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী মুহম্মদ হিলাল উদ্দিন (হিলাল ফয়েজী)।
আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে মইনুদ্দিন আহমদ জালাল স্মরণে শুক্রবার সকালে সিলেটে সুরমা তীরে ‘নদী বন্ধু, নদী সংগ্রামী’ স্মরণ অনুষ্ঠানের স্মারক বক্তৃতায় হিলালউদ্দিন বলেছেন, যে নদীকে আমরা দখল, দূষণ আর অবিবেচক নির্মাণের শিকার হতে দেখি, এই নদীকে বাঁচাতে আজীবন জানপ্রাণ লড়েছেন মইনুদ্দিন আহমদ জালাল। তাঁর নদী সংগ্রাম শুধু সুরমা-কুশিয়ারা-মেঘনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। পৃথিবীর যে সকল দেশে তিনি গিয়েছেন, সব নদী প্রান্তরে তিনি গেয়েছিলেন, সেখানে দাঁড়িয়ে নদী অন্তঃপ্রাণ মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাই নদীর মধ্যেই তাঁর দীপ্ত উপস্থিতি, তিনি নদী সংগ্রামী।’
মইনুদ্দিন আহমদ জালাল জীবদ্দশায় অঙ্গীকার বাংলাদেশের পরিচালকমন্ডলির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি বছর নদীকৃত্য দিবসে তাঁর নেতৃত্বে সিলেটে সুরমা নদীতীরে নদীঅধিকার নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন হতো। গত বছরের ১৮ অক্টোবর ভারতে শিলংয়ে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। অঙ্গীকার বাংলাদেশ এবার সিলেটে তাঁকে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে উদযাপন করে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুহম্মদ হিলালউদ্দিনের স্মারক বক্তৃতার পর সিলেটের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নগরনাট’ কবিতা ও গানে নদীসংগ্রামের চেতনা ছড়িয়ে দেয়। দেবপ্রিয়া পালের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পরিবশনায় অংশ নেন নগরনাটের অরূপ বাউল, উজ্জ্বল চক্রবর্তী, মজুমদার অপু, শ্যামলী দাশ, রূপালী দাশ, সোনিয়া সুভদ্রা, অচ্যুত চক্রবর্তী।
সুরমা নদী তীরে উন্মুক্তভাবে প্রায় এক ঘন্টা চলা এ অনুষ্ঠানে একাত্ম হয়েছিলেন সিলেটের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি শুভেন্দু ইমাম, অধ্যাপক সামসুল আলম, সিলেটের সৃজনশীল বইয়ের দোকান ‘বইপত্র’ স্বত্ত্বাধিকারী সেলিমা সুলতানা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফউজ্জামান, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা বেগম, যুব ইউনিয়ন যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সভাপতি আ ক ম হোসেন চন্নু, সিপিবি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন, নাগরিক মৈত্রীর আহবায়ক সমর বিজয় সী শেখর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা সিলেট শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ছামির মাহমুদ, যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক খায়রল হাছান, সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতানা রোকেয়া পারভিন, স্কুল শিক্ষক শামীম আরা বেগম প্রমুখ।
শেষ পর্বে সিলেটের প্রবীণ বাম রাজনীতিবিদ ও গণতন্ত্রী পাটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী ও মইনুদ্দিন আহমদ জালালের স্ত্রী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী বক্তব্য দেন। তাঁদের কথায় মইনুদ্দিন আহমদ জালালকে নদীর মতো চিরঞ্জীব করে রাখার প্রত্যয়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ‘নদীবন্ধু, নদীসংগ্রামী’ শীর্ষক স্মরণ-অনুষ্ঠান। বিজ্ঞপ্তি